বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯

কানের প্রদাহ (Otitis media) কান পাকা রোগ ও এর সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি

অনেকেই আছেন যারা এই কান পাকা রোগটিকে খুব সাধারণ মনে করে থাকেন এবং ঠিকমত চিকিৎসাও করান না। কিন্তু এই রোগের ঠিকমত চিকিৎসা না করালে নানারকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রোগী মারাত্মক জটিলতা নিয়ে আমাদের কাছে এত দেরীতে আসে যে তখন সর্বপ্রকার চেষ্টা করেও রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব হয় না।

আমাদের কানের তিনটি অংশ আছে। যথা: বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। মধ্যকর্ণের প্রদাহকেই আমরা সাধারনত কানপাকা রোগ বলে থাকি। কান দিয়ে পুঁজ পড়া ও কানে কম শোনা এ দুটি এই রোগের প্রধান উপসর্গ। কানপাকা রোগ দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি হল- সাধারণ বা নিরাপদ কানপাকা রোগ, যা সাধারণত কোনো মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে না এবং এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুর্গন্ধবিহীন, পাতলা পুঁজ কান থেকে বের হয়।

অন্যটি হল, অনিরাপদ কান পাকা রোগ, যা জীবন হানিকর জটিলতা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে কানে দুর্গন্ধযুক্ত, ঘন পুঁজ কান থেকে বের হয় ও সেখানে সাধারণত কোলেস্টেটোমা উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেটোমা এমন একটি জিনিস, যেটি কানের আশেপাশের হাড় এবং অন্যান্য নরম কোষকলাকে সহজেই ধ্বংস করে কানের প্রদাহ মস্তিষ্কের বাহিরে ও ভিতরে ছড়িয়ে দিতে পারে। ফলে অনিরাপদ কানপাকা রোগে মধ্যকর্ণের প্রদাহ ইহার অস্থি প্রাচীর ভেদ করে মধ্যকর্ণের সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন- মস্তিষ্কের ঝিল্লী, মস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের রক্তবাহী সাইনাস, ফেসিয়াল নার্ভ ও অন্তঃকর্ণ ইত্যাদিতে প্রদাহ সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে; যার পরিণতি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

কান পাকা - কারণ

  • মধ্যকর্ণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে ইনফেকশন হয়ে থাকে
  • সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু বা এ্যালার্জি জনিত সমস্যার জন্য নাসিকা পথ, গলা এবং ইউস্টিশিয়ান নালী (Eustachian tubes) ফুলে যায় ও বন্ধ হয়ে যায় এবং এর জন্য ইনফেকশন হয়ে থাকে
  • শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বার বার সংক্রমণ হলে
  • সাধারণ সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে
  • মুখ গহ্বরের গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে
  • টনসিলের সংক্রমণ হলে
  • নাক ও গলার সংযোগ স্থলে টিউমার হলে বা অন্য কারণে অডিটরি টিউব বন্ধ হয়ে গেলে
  • হাম হলে
  • মুখ ও খুলির হাড়ের মাঝে অবস্থিত ফাঁকা অংশের ঘনঘন প্রদাহ হলে (সাইনোসাইটিস)

কান পাকা - লক্ষণ

  • জ্বর
  • কাশি
  • নাক বদ্ধ হয়ে যাওয়া 
  • গলা ব্যথা
  • বমি
  • কান লাল হয়ে যাওয়া
  • হাত দিয়ে কান টানার অভ্যাস
  • কানে পানি জমা
  • শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া বা কানে কম শোনা
  • কানে বদ্ধতা অনুভব করা
  • বাইরে থেকে কানের ভেতরে আলো ফেললে দেখা যাবে কানের পর্দা লাল হয়ে আছে। পর্দা ফেটে গেলে পুঁজ দেখা যায়।
  • কানের পর্দা ফেটে গেলে কান দিয়ে পুঁজ পড়ে (এ সময় জ্বর ও কান ব্যথা কমে যায়)
  • কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার পর রোগী কানে কম শোনে।

কান পাকা - রোগ নির্ণয়

কান পাকা রোগ শুধু রোগীর রোগ লক্ষণ, রোগীর কান পরীক্ষা ও প্রয়োজনে সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন কানের এক্সরে ইত্যাদি করেই নিণর্য় করা যায়। কান পরীক্ষা করলে সকল ক্ষেত্রেই কানের পর্দায় ছিদ্রের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। অনিরাপদ কানপাকা রোগে কানের পর্দায় ছিদ্র ছাড়াও সাদা বলের মত কোলেস্টেটোমা দেখা যায়। অডিওমেট্রি পরীক্ষা করে রোগী কানের বধিরতার পরিমাপ করা হয়। কিন্তুু রোগের মস্তিস্কের ভিতরের জটিলতা নির্ণয় করতে হলে উপরোক্ত রোগ লক্ষণের সাথে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন শিরদাড়ার পানি পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করতে হবে। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য রক্ত কালচার পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

কান পাকা - চিকিৎসা

এলোপ্যাথিতে মূলত এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, কানে জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করলেই অস্থায়ীভাবে কান থেকে পুঁজ পড়া বন্ধ করার চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনও করা হয়ে থাকে।

হোমিওপ্যাথিতে রোগীর কান পাকার ধরণ, পুঁজের ধরন এবং অন্যান্য যাবতীয় লক্ষন সমষ্টি নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। তাই এই সমস্যায় অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।

কান পাকা - প্রতিকার

এছাড়া কিছু নির্দেশ সব সময়ই পালন করতে হবে যেমন- কানে পানি না ঢোকানো, ডুব দিয়ে গোসল না করা, ময়লা কোন কিছু দিয়ে কান পরিষ্কার না করা। 
Dr. Delowar Jahan Imran
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤