করোনাভাইরাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
করোনাভাইরাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১

ঔষধ ছাড়াই কোভিড ১৯ এর প্রাকৃতিক চিকিৎসা ! COVID-19 কিউর ডাইট

ঔষধ ছাড়াই COVID-19 বা করোনা রোগীর প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে যা রাসায়নিক বা এলোপ্যাথিক ঔষধের তুলনায় দুর্দান্ত কার্যকর এবং সহজ। কোভিড ১৯ সমস্যায় দক্ষ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিলে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন এবং পোস্ট কোভিড সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ারও কোন ঝুঁকি নেই। কিন্তু আপনি কোথাও যেতে পারছেন না সেই মুহূর্তে অথবা জ্বর, কাশি, সর্দি, ব্যথা বা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার প্রথম থেকেই ঘরে বসে নাচারোপ্যাথির এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। ম্যাজিকের মতো রেজাল্ট পাবেন ইনশা-আল্লাহ। 

COVID-19 কিউর ডাইট

ভাইরাস, জ্বর, কাশি, সর্দি, ব্যথা বা কোভিড১৯ রোগী প্রতিদিন ২০ মিনিট রোদের তাপ নিন আর নিচের থেরাপি অনুসরণ করুন -

জ্বর ১০০ এর নীচে রাখবে

  • ৬ পিস কালো গোল মরিচ, ৬ পিস তুলশি পাতা, কাচা হলুদ হাফ ইঞ্চি, লং ৪ পিস, আদা ১ চামচ, সব একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে। সকালে-দুপুরে-রাতে খাবার আগে খাবেন। এটা এক বেলার/দিনের জন্য দেয়া হল।
  • গরম পানি খাবেন ও গড়গড়া করে কুলি করুন দিনে ৪ বার।
  • যা যা খেতে হবে: ফল ভিটামিন সি- মাল্টা, কমলা, আনারস, আমলকি, ডাব, আনার।

প্রথম  দিন যা যা খেতে হবে 

  • তরল বা জুস খাবার।
  • যদি আপনার ওজন ৭০ কেজি হয় তাহলে ৭০ ÷ ১০ = ৭ গ্লাস। এর মানে হচ্ছে, সারাদিনে ৭ গ্লাস মাল্টা/কমলা/আনারস ফলের জুস + ৭ গ্লাস ডাবের পানি বা আনার ফলের জুস। 

দ্বিতীয় দিন যা যা খেতে হবে

  • তরল খাবার।
  • যদি আপনার ওজন ৭০ কেজি হয় তাহলে ৭০ ÷ ২০ = ৩.৫ গ্লাস। এর মানে হচ্ছে, সারাদিনে ৩.৫ গ্লাস মাল্টা/কমলা/আনারস ফলের জুস + ৩.৫ গ্লাস ডাবের পানি বা আনার ফলের জুস। 
  • সেইসাথে টমেটো + শসার সালাদ খেতে হবে। ওজন যদি হয় ৭০ কেজি তাহলে ৭০✕৫=৩৫০ গ্রাম খেতে হবে দুপুরে ও রাতে।

তৃতীয় দিন যা যা খেতে হবে 

  • সলিড খাবার।
  • যদি আপনার ওজন ৭০ কেজি হয় তাহলে ৭০ ÷ ৩০=২.৫ গ্লাস। এর মানে হচ্ছে, সারাদিনে ২.৫ গ্লাস মাল্টা/কমলা/আনারস ফলের জুস + ২.৫ গ্লাস ডাবের পানি বা আনার ফলের জুস।
  • সেইসাথে টমেটো + শসার সালাদ খেতে হবে। ওজন যদি হয় ৭০ কেজি তাহলে ৭০✕৫=৩৫০ গ্রাম খেতে হবে দুপুরে ও রাতে।
  • রাতে রান্না করা খিচুরি খেতে দিন।
  • গরম পানির ভাব নিন। ২ গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ কালিজিরার তেল, ৪ পিস লং এর গুড়া, ২ চিমটি হলুদ গুড়া, হাফ লেবু দিন। পানি গরম হলে ভাব নিন ৫ মিনিট। দিনে ৩ বার।

ফুসফুসে পানি জমা হলে কি করবেন?

  • নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ইনফেকসন বা শ্বাসকষ্ট থেকে বাচতে হলে, প্রতিদিন ১ চামুচ কাচা হলুদ, ১ গ্লাস গরম পানিতে ফুটাতে হবে,ফুটানো পানি অর্ধেক হয়ে আসলে, ঠান্ডা করে পান করুন। দিনে ৩ বার পান করেন, খাবারের ৩০ মিনিট আগে।
  • কফ জমে গেলে বুকে ৫ চামচ পেয়াজের রস খালি পেটে খেতে দিন।

মালিশ থেরাপি

  • বুকে ও পিঠে ৫ চামচ সরিষার, ৫ চামচ রসুন বাটা, ৫ মিনিট চুলায় গরম করুন, এরপর তেল এ মিশিয়ে এক চিমটি কর্পূর মিশিয়ে মালিশ করুন। দিনে দুইবার।
বিঃদ্রঃ আগে থেকেই দুরারোগ্য কোন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে বা যেকোন জটিল পরিস্থিতিতে রেজিস্টার্ড এবং দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন প্রয়োজন বোধে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ

যা যা জেনেছেন 

করোনার ঘরোয়া চিকিৎসা
বিস্তারিত

সোমবার, ১০ মে, ২০২১

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম ! করোনা বা কোভিড পরবর্তী শারীরিক ও মানসিক জটিলতার চিকিৎসা

COVID-19 (coronavirus) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় এর থেকে সেরে উঠছেন তাদের শরীরে নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে সেগুলিকেই বলা হয় পোস্ট কোভিড সিনড্রোম Post COVID Syndrome অর্থ্যাৎ করোনা বা কোভিড পরবর্তী শারীরিক ও মানসিক জটিলতা। শুধু কোভিড নয় যেকোন সংক্রামক রোগ থেকে সেরে উঠার পর অনেকেরই শরীর খুব সহজেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেখা যায় না। ঠিক তেমনি, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরও প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগী শারীরিক অথবা মানসিক কোন না কোন জটিলতায় ভুগছেন যা হোমিও চিকিৎসায় সফল ভাবে ঠিক করে নিয়ে আসা যায়।
কোভিড পরবর্তী শারীরিক ও মানসিক জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছে - কোভিড নিউমোনিয়া, হাইপারটেনশন, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, নিউরোজিক্যাল সমস্যা, হৃদরোগ, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কিডনিতে সংক্রমণসহ বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানুষিক জটিলতা। যারা COVID-19 এ আক্রান্ত হলে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রেই এই জটিলতাগুলি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।  
পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম (Post COVID 19 Syndrome) গুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের নানা সমস্যা, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, অগ্নাশয় প্রদাহ, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, অবসন্নতা, নিদ্রাহীনতা, বুক ধড়ফড় করা, গায়ে ব্যথা, পেটে নানা গোলযোগ, পূর্বে কোন রোগে ভুগতে থাকলে যেমন ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ হার্টের রোগ ইত্যাদি গুরুতর আকার ধারণ করা। এছাড়াও ভাইটাল ফোর্সের দুর্বলতর অবস্থায় শরীরের নানা অঙ্গে নানা রকম জটিল প্রকৃতির লক্ষণ ও উপসর্গ জেগে উঠে যেগুলি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে অর্থাৎ ব্যক্তি ভেদে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
পোস্ট কোভিড সিনড্রোম
ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন আমরা জন্মলগ্ন থেকেই ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল বা কিছু প্রকৃত রোগ নিয়ে আসি। করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ সে সকল লোকজনদেরই স্বাস্থ্যের বিপর্যস্থ অবস্থা সৃষ্টি করে থাকে যারা মূলত Tubercular Diathesis (TD) এর পেসেন্ট। যা তৈরি হয় Psora এবং Syphilis এর সম্মিলনে তবে কখনো কখনো Psora, Syphilis, Sycosis এর সম্মিলনও দেখা যায়, যাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় Triple TDS. আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সবগুলি True Disease এর উপস্থিতিও পরিলক্ষিত হয়। 
আপনি Tubercular Diathesis এর পেসেন্ট অথবা TB Predominant, আপনার ভাইটাল ফোর্স দুর্বল এবং কোন না কোন গুরুতর সংক্রামক পীড়া যেমনঃ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় জেনে রাখুন, আপনার DNA তে বিদ্যমান True Disease প্রকট বা তীব্র হয়ে উঠবে এবং আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন জটিল প্রকৃতির রোগ লক্ষণ জাগিয়ে তুলবে অথবা পূর্বে থেকে ভুগে আসছেন এমন রোগ লক্ষণগুলিকে আরো গুরুতর করে তুলবে। এরপর থেকে আপনি হয়তো আর কখনও ভালো থাকতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনার DNA তে প্রিডোমিনেন্ট True Disease কে প্রোপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে Recessive না করেছেন।

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা এর থেকে সেরে উঠেছেন পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। করোনা বা কোভিড পরবর্তী শারীরিক ও মানসিক জটিলতারগুলির মধ্যে যেগুলি বেশি দেখা দিতে পারে -
  • ভীষণ দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ।
  • অনেকের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ওজন খুব দ্রুত কমে যায়।
  • ফুসফুসের দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা ও কাশির সমস্যা হতে পারে।
  • ফুসফুসের দেয়ালে প্রদাহের সৃষ্টি করে, ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে ।
  • যেসব রোগীদের আইসিইউ বা জরুরি অক্সিজেন নিতে হয়েছে তাদের অনেকের ফুসফুসে পালমোনারি ফাইব্রোসিস সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সমস্যায় শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট, শুকনো কাশি, ক্লান্তি অবসাদ, ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। 
  • কোভিড রোগীরা পরবর্তীতে হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি এক্ষেত্রে একেবারেই সাধারণ বিষয়। 
  • অনেক রোগী একিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্নাশয় প্রদাহ জনিত জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে রোগীদের পেটে তীব্র ব্যথা হয়।
  • যাদের আগে থেকেই হাই প্রেশার, লো প্রেশার, কোলেস্টোরেল বা ডায়বেটিসজনিত সমস্যা আছে কোভিড পরবর্তী সময়ে সেগুলির জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে। 
  • যারা হাইপার টেনশনে ভোগেন তাদেরও প্রেশার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
  • যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ খুব দ্রুত ওঠা নামা করতে পারে।
  • করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পরও অনেক রোগী দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্ণতায় ভুগেছেন। অনেকেই কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না।
  • এছাড়াও হৃদরোগ, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কিডনিতে সংক্রমণসহ আরো বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারো কারো মনে হবে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আর ভালো নেই। একটার পর একটা সমস্যা যেন লেগেই আছে। 

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম - চিকিৎসা 

কোভিড ১৯ চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি রোগের শুরুতেই তাকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যথাসময়ে প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা না নিয়ে নানা প্রকার রাসায়নিক বা এলোপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কোভিড পরবর্তী সময়ে নানা প্রকার জটিল শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

পূর্ব থেকে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন এমন রোগীরা যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখেছি, নানা প্রকার মনোদৈহিক জটিলতায় তারা দিন পার করছেন। তাছাড়া TB Predominant এমন পেশেন্ট যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এর থেকে সেরে উঠেছেন তাদের তো আর কথাই নেই। একের পর এক নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা যেন তাদের নিত্য সঙ্গী। উচ্চ ডিগ্রীধারী ডাক্তার দেখাচ্ছেন, একের পর এক বিভিন্ন মেডিক্যাল টেস্ট করে চলেছেন কিন্তু কোন সমস্যাই ধরা পড়ছে না অথচ শরীর মন কোনটাই তার ভালো নেই। দিন দিন স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে।  কি থেকে কি হচ্ছে তারা বুঝতেই পারছেন না। 

দেখা যাচ্ছে, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এর থেকে সেরে উঠার পর লোকজন আর ভালো থাকেন না। একের পর এক নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বুঝতেই পারছেন না, কি থেকে কি হচ্ছে। অথচ কোভিড পরবর্তী যাবতীয় শারীরিক ও মানসিক জটিলতা অনায়াসেই নির্মূল হচ্ছে হোমিও চিকিৎসায়। এই সমস্যা থেকে পুরুপুরি মুক্তি পেতে রেজিস্টার্ড এবং দক্ষ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রপার চিকিৎসা নিন। কারণ পোস্ট কোভিড সিনড্রোম (Post-COVID Syndrome) নির্মূলে হোমিওপ্যাথি দুর্দান্ত চমক দেখাচ্ছে। ধন্যবাদ।
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

করোনাভাইরাস COVID-19 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা! হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগীরা উচ্চ ঝুঁকিতে

করোনাভাইরাস COVID-19 এ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে মূলত বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিরা বিশেষ করে যারা হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন। কারণ মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর ধরে নানা প্রকার অপচিকিৎসায় এবং রাসায়নিক ঔষধের ক্রমাগত প্রয়োগের ফলে তাদের অনেকেরই ভাইটাল ফোর্সের অবস্থা প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। বলতে গেলে আধুনিক রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ করে করে মানুষকে আজ মেডিসিনের রোগীতে পরিণত করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তারা আরো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়, যার ফলে তারা ঔষধ ছাড়া কিছুতেই বাঁচতে পারে না। অথচ যথাসময়ে হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এর প্রপার হোমিও চিকিৎসা করা হলে বহু ক্ষেত্রেই তারা স্থায়ী ভাবে আরোগ্য লাভ করে থাকে।
কিন্তু অনেকেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে ততটা জ্ঞান রাখে না বিধায় এই সকল রোগের আক্রমণে তারা প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিয়ে স্থায়ীভাবে সুস্থতা লাভ করা থেকে বঞ্চিত হয় এবং নানা প্রকার অপচিকিৎসা নিয়ে এবং সাময়িক ভাবে ভালো থাকার জন্য ক্রমাগত বিভিন্ন রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ করে করে সেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরে আরো নানা প্রকার জটিল রোগের জন্ম দিচ্ছে। যার ফলে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে তারা একটি দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। প্রথম অবস্থায় এই সকল রোগ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় যতটা সহজে নিরাময় করা যায় পরবর্তীতে যখন তারা মেডিসিনের রোগী হয়ে যায় তখন তাদের ভাইটাল ফোর্সকে উন্নত করতে বেশ সময় লেগে যায়। তবে আশার দিক হলো - ধৈর্য ধরে প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিলে ধীরে ধীরে তারাও ঠিক হয়ে আসে।
ইন্টারনেটে যেভাবে ঢালাওভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নাম বলে দিয়ে সেগুলি খেতে বলা হয় - হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্যকোন জটিল সমস্যায় আক্রান্ত পেসেন্টরা সেগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ যারা এই সকল রোগে আক্রান্ত থাকেন তাদের ভাইটাল ফোর্স উন্নত করার জন্য অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রপার ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরী। তখন বর্তমান রোগ জটিলতা যেমন কমে আসবে সাথে সাথে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরী হবে।

কীভাবে হোমিও চিকিৎসায় ঠিক হয়ে আসে ?

প্রতিটি মানুষই মূলত জন্মলগ্ন থেকেই পূর্বপুরুষের থেকে প্রাপ্ত রোগ ব্যাধি নিয়ে আসে। কিভাবে নিয়ে আসে এ সম্পর্কে আগে আলোচনা করি। মনে করুন... পিতার শুক্রাণু এবং মাতার ডিম্বাণুর মিলনে ঘন্টা খানেক হলো একটি জাইগোট তৈরি হয়েছে। সেখানে রয়েছে তার পিতা মাতা উভয়ের থেকে প্রাপ্ত ক্রোমোজোম যা হচ্ছে বংশগতির প্রধান উপাদান। মজার ব্যাপার হলো জাইগোটটির বয়স ১ ঘন্টা হলেও তার ভাইটাল ফোর্সকে ঘিরে যে ক্রোমোজোম রয়েছে তার বয়স কিন্তু কয়েক লক্ষ বছর বা তারও বেশি। এর মাধ্যমেই আপনার পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা তারও পূর্ব পুরুষ থেকে সকল রোগের জেনেটিক মেটেরিয়াল অর্জন করে রেখেছেন জন্ম থেকেই।
করোনাভাইরাস (COVID-19) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পরামর্শ
যতদিন আপনার ভাইটাল ফোর্স শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে তত দিন ভেতরের প্রকৃত রোগটি বা অনেকগুলি জটিল রোগের জেনেটিক মেটেরিয়াল এমনিতেই নিস্তেজ অবস্থায় থাকে। আর যখন ভাইটাল ফোর্স দুর্বল হয়ে যাবে তখন ভেতরের সেই True Disease বা প্রকৃত রোগটি প্রকট হয়ে উঠে অথবা নানা প্রকার উপসর্গ প্রকাশ করে কষ্ট দিয়ে থাকে। যখন আপনার ভাইটাল ফোর্স দুর্বল হয়ে পড়ে তখন হার্ট, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এর মতো রোগে আপনি আক্রান্ত হচ্ছেন। পূর্ব পুরুষ থেকে প্রাপ্ত রোগ বা রোগের জেনেটিক মেটেরিয়াল সরাসরি আপনার মধ্যে হয়তো প্রকাশিত হবে না। তবে যেটির জেনেটিক মেটেরিয়াল প্রকট থাকবে সেটি নানা প্রকার উপসর্গ প্রকাশ করে আপনাকে কষ্ট দিতে থাকবে, যতদিন না আপনি প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নিয়ে সেটিকে ঠিক করেছেন। কারণ পৃথিবীতে একটি মাত্র চিকিৎসা শাস্ত্রই এই বিষয়টির যথাযথ সমাধান করতে পারে আর সেটি হলো হোমিওপ্যাথি। 

এই সকল উপসর্গকে এবং উপসর্গের স্থানিক কারণগুলি নির্ণয় করে বিভিন্ন রোগের নাম দিয়ে উপরি উপরি চিকিৎসা দিয়ে থাকে হোমিওপ্যাথি ছাড়া পৃথিবীর সকল ট্রিটমেন্ট সিস্টেম। অথচ ভিতরে প্রকৃত রোগের চিকিৎসা না করার কারণে সাময়িক ভাবে লক্ষণ বা উপসর্গ কিছুটা কমে আসে বা নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু কখনই স্থায়ীভাবে ঠিক হয় না। আবার যেহেতু রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ করে এক প্রকার জোর করে এই কাজটি করা হয় তাই সেক্ষেত্রে জটিলতা দিন দিন বাড়তে থাকে। একসময় ভাইটাল ফোর্স এতোটাই ক্ষীণ হয়ে পড়ে যে, সাধারণ ভাইরাসের আক্রমণেই তাদের অনেকের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যায়।

করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। যদি আপনার ভাইটাল ফোর্স শক্তিশালী থাকে তাহলে এই সকল কোন ভাইরাসই শরীরে ঢুকে কোন সুবিধা করতে পারে না। 

আপনি যখন অভিজ্ঞ কোন হোমিও চিকিৎসকের নিকট যাবেন তিনি আপনার মা, বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং আপনার নিজের বিস্তারিত হিস্ট্রি নিবেন এবং এবং আপনার মধ্যে বিদ্যমান প্রকৃত রোগটি বের করে সেটিকে দূর করার জন্য ডায়নামিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করবেন। তখন ধীরে ধীরে আপনার ভাইটাল ফোর্স উন্নত হতে থাকবে আপনি সুস্থতার দিকে আগাবেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতে অভিজ্ঞ কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।  মূলত চিকিৎসক আপনার হিস্ট্রি নিয়ে আপনার অবস্থার আলোকে যে সদৃশ ঔষধটি প্রয়োগ করবেন সেটিই আপনার ঔষধ এবং সেটিই আপনার রোগ প্রতিরোধ করবে। রোগ প্রতিরোধের শর্ত ব্যক্তিকে সুস্থ্য থাকা।

হোমিওপ্যাথির ভাষায় জীবনীশক্তি (Vital Force/ Vital Principle) বা এলোপ্যাথির ভাষায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune System) একই বিষয়। যখন কোন রোগশক্তির প্রতি সংবেদনশীল হয় তখনই মানুষ অসুস্থ হয়। প্রতিটি মানুষের মাঝে "আত্মা" ও "ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি" রয়েছে এবং দুটোই অদৃশ্য সত্ত্বা। 
আপনার ভাইটাল ফোর্স বা জীবনী শক্তি উন্নত সেটা বুঝবেন কিভাবে ?
আপনার মধ্যে পাপ চিন্তা নেই, অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা নেই, রোগ হওয়ার ভয় নেই, ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার ভয় নেই এবং আপনি নীরোগ, আপনাকে ক্রমাগত কোন ঔষধ খাওয়া লাগে না তার মানে আপনার ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি উন্নত। এবার আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন আপনি কোন অবস্থায় আছেন। হোমিওপ্যাথি ছাড়া ট্রাডিশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষকে সারা জীবন ধরেই বিভিন্ন রাসায়নিক ঔষধ খাইয়ে যায় যেগুলি মেডিসিনাল ট্রমা তৈরী করে এবং এই কারণেও মানুষের ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি দিন দিন দুর্বল হতে থাকে। এক সময় সামান্য ভাইরাসের আক্রমণেই দুর্বল জীবনীশক্তির এই লোকজন কাবু হয়ে যায়। অথচ ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি উন্নত অবস্থায় থাকলে ভাইরাস ও রোগ জীবাণুকে মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের শরীর বের করে দেয়।
ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান "ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি" মতবাদ গ্রহণ করে হোমিওপ্যাথিতে প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিষয়ে বলেন যে, জড় দেহের সকল চেতনা, শক্তি, সামর্থ্য, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ অনুভব, চিন্তা-ভাবনা, স্মৃতিশক্তিসহ সকল প্রকার জৈব-ক্রিয়াকলাপের মূলে হলো ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি। আত্মার অন্তঃপ্রবাহ ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তির মাধ্যমে জীবদেহকে সকল কর্মকান্ডের উপযোগী করে রাখে। আত্মা ও জীবনীশক্তি উভয়ই অদৃশ্য বটে কিন্তু একই জিনিস নয়। স্রষ্টার আদেশ ঘটিত আত্মার অন্তঃপ্রবাহের দরুণ জড়দেহ চেতনা লাভ করে। এই আত্মাটি অমর কিন্তু জীবনী শক্তি ক্ষয়শীল এবং জড়দেহটি ধ্বংসশীল।

বর্তমানে যে ইমিউনিটি সিস্টেমের (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) কথা হয়ে থাকে তা ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান দুইশত বছর আগেই বলে গিয়েছেন। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ করা, রোগাক্রান্ত হওয়া, রোগযন্ত্রণা ও রোগ লক্ষণ প্রকাশ করা, ইন্দ্রিয় সমূহের মাধ্যমে অনুভূতি গ্রহণ করা এবং রোগে আক্রান্ত হবার পর যথার্থ সদৃশ ঔষধ শক্তির সাহায্যে রোগ আরোগ্য করা ইত্যাদি ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তির প্রধান কাজ। আমরা তখনই অসুস্থ হই যখন আমাদের ভাইটাল ফোর্স বা জীবনীশক্তি কোন রোগশক্তির প্রতি সংবেদনশীল হয়। সহজ কথায় আমাদের জীবনীশক্তিতে যখন কোন রোগের প্রতি চাহিদা তৈরী হয় তখন সেই রোগে পীড়িত হই।

রোগ শক্তির বিরুদ্ধে নাছোড় জীবনীশক্তি (ভাইটাল ফোর্স) অবিরত সংগ্রাম করে চলেছে। সংগ্রামে পরাভুত হলেই সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক লক্ষণসমষ্টি। সাহায্যের নিমিত্ত বলবত্তর অধিকতর শক্তিশালী সদৃশ ঔষধ শক্তি যখন জীবনীশক্তির (ভাইটাল ফোর্স) সংস্পর্শে আসে, তখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল রোগশক্তি আর টিকে থাকতে পারে না, দ্রুত অপসৃত হয়। ঔষধ শক্তির সীমিত ক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে জীবনীশক্তি (ভাইটাল ফোর্স) সম্পূর্ণ মুক্ত হয় ও রোগী আরোগ্য লাভ করে।

যেহেতু হোমিওপ্যাথি ঔষধ বিভিন্ন শক্তিকৃত শক্তি এবং কোন রাসায়নিক অস্তিত্ব থাকে না, কাজেই এটা দেহের উপর গতিশীল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। আপনার দুরারোগ্য যেকোন স্বাস্থ সমস্যায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের তথ্যাবধানে চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
বিস্তারিত