হোমিওপ্যাথি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হোমিওপ্যাথি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ টিউবারকুলিনাম এবং ব্যাসিলিনাম এর পার্থক্য কি?

হোমিওপ্যাথিতে ব্যাসিলিনাম এবং টিউবারকুলিনাম ঔষধ দুটির পার্থক্য মূলত কি? আমরা জানি টিউবারকুলিনাম একটি নোসোড ঔষধ। যক্ষ্মার জীবানু (ব্যাসিলাস) বা যক্ষ্মা রোগগ্রস্ত কোষ বা পুঁজ থেকে এটি প্রস্তুুত করা হয়। যে উৎস থেকে এটি প্রস্তুুত করা হয় সেই অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়। যক্ষ্মারোগীর ফুসফুসের ক্ষত থেকে বা থুথু থেকে যে ঔষধটি তৈরী হয় তাকে টিউবারকুলিনাম বলা হয়। এটি ডাঃ এ্যলেন মহোদয় বিশেষভাবে পরীক্ষা করেন।

আর যক্ষ্মারোগগ্রস্ত রোগীর ফুসফুসের কোষ বা থুথু যেখানে যক্ষ্মার জীবাণু রয়েছে সেখান থেকে প্রস্তুুত ঔষুধকে বলা হয় ব্যাসিলিনাম। এটি ডাঃ বার্ণেট মহোদয় বিশেষভাবে পরীক্ষা ও প্রচার করেন।
টিউবারকুলিনাম এবং ব্যাসিলিনাম ঔষধের মধ্যে পার্থক্য

টিউবারকুলিনাম ও ব্যাসিলিনাম এর মধ্যে পার্থক্য 

  • শৈশবের জীবন দর্শন পর্যালোচনা করলে জন্মের ১ দিন থেকে ১ বছর সময়কালে টিউবারকুলিনাম রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্যের দোষ পাওয়া যায় আর ব্যাসিলিনামের রোগীর আমাশয় অথবা পাতলা পায়খানার হিস্ট্রি পাওয়া যায়। 
  • টিউবারকুলিনাম শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশ যেমন ঘাড়, গলা, গ্ল্যান্ড আক্রমণ করে। অপরদিকে ব্যাসিলিনাম শ্বাসযন্ত্রের নিচের অংশ যেমন ফুসফুস আক্রমণ করে। এই কারনে শ্বাসকষ্ট, যক্ষা, নিউমোনিয়া লেগে থাকে।
  • টিউবারকুলিনাম অস্থির প্রকৃতি, আবেগ প্রবণ, বুদ্ধিমান হয়। বাচ্চারা ইঁচড়েপাকা হয়। অন্যদিকে ব্যাসিলিনাম হাবাটে টাইপের হয়।
  • টিউবারকুলিনাম শীতকাতর আর ব্যাসিলিনাম গরমকাতর
  • ব্যাসিলিনাম এর ভ্রু জোড়া লাগানো থাকে। অন্যদিকে টিউবারকুলিনাম ঠোট লাল, চুল জট পাকানো, নখ পাখির মতো পাকানো থাকে।
  • টিউবারকুলিনাম চর্মরোগ চাপা পড়ার পর রোগ আসে। আর ব্যাসিলিনাম ভ্যাক্সিনেশনের সাইড এফেক্ট থেকে রোগ আসে।
  • ব্যাসিলিনাম এর চর্মরোগ দেখতে দাদের মতো। অপরদিকে টিউবারকুলিনাম এর চর্মরোগ চামড়ার ভাজে ভাজে হয়, লাল হয়, সোরার মতো।
  • টিউবারকুলিনাম এর নির্গমণ ক্ষতকর প্রকৃতি হয়। আর ব্যাসিলিনাম এর নির্গমণ শুকনা হয়।
  • ব্যাসিলিনামে সোরা মায়াজম সাথে সাইকোসিস মায়াজমের প্রবনতা বেশি। অন্যদিকে টিউবারকুলিনামে সিফিলিস মায়াজমের প্রবনতা বেশি। তাই এরা ধংসাত্নক হয়।
  • ব্যাসিলিনামে যৌন ইচ্ছা স্বাভাবিক। অন্যদিকে টিউবারকুলিনামে যৌন ইচ্ছা অত্যাধিক। এটা কিশোর বয়সে দেখা যায় বেশি। যার জন্য তারা যেভাবেই হক তার ইচ্ছা পূরণ করে।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দুর্বল শিশু, বয়স্কদের ফুসফুস এবং হার্টের সমস্যা অত্যাধিক হলে ব্যাসিলিনাম ব্যবহার করা নিরাপদ। 
উভয়ই মেডিসিনের ক্ষয়দোষ ইতিহাস পাওয়া যায়। রোগীর অল্পতেই ঠান্ডা লাগবে, রোগী জানেনা কেন তার বার বার ঠান্ডা  লাগে।

বিঃদ্রঃ যেকোন সমস্যায় নিজে নিজে ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ হোমিও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে হোমিওপ্যাথিক নিয়মে কেইস টেকিং এবং ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন। তাই অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন। ধন্যবাদ।
বিস্তারিত

শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

সোরিক, সিফিলিটিক, সাইকোটিক এবং টিউবারকুলার মায়াজমের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য

সোরিক, সিফিলিটিক, সাইকোটিক এবং টিউবারকুলার মায়াজম এর প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে এই পর্বে। ইতিপূর্বে আপনারা মানব দেহের প্রকৃত রোগগুলি সম্পর্কে জেনেছেন যেগুলি আমরা বংশানুক্রমিক ভাবে পেয়ে থাকি। সকল মায়াজমই হলো প্রকৃত রোগ। সেগুলির মধ্যে কিছু প্রকৃত রোগের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আসুন জেনে নিই- 
মায়াজম
 ক্রিয়াস্থল
  • সোরিক- সোরার ক্রিয়া চিন্তা ধারার উপর
  • সিফিলিটিক- সিফিলিসের ক্রিয়া যকৃতের উপর
  • সাইকোটিক- সাইকোসিসের ক্রিয়া অন্ত্র ও সন্ধি পথে
  • টিউবারকুলার- টিউবারকুলোসিসের ক্রিয়া ফুসফুস, সেরাস মেমব্রেন, গ্রন্থি, অন্ত্র, হাড়
প্রকাশ
  • সোরিক- চুলকানি বা খোসপাঁচড়া দেখা দেয়। মনোকন্ডুয়ন হতে চর্মকন্ডুনের সৃষ্টি। চর্মপীড়া চাপা পড়ে সর্দি। শুষ্ক ও রস শূন্য উদ্ভেদ।
  • সিফিলিটিক- জননেন্দ্রিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি প্রাথমিক লক্ষণ। বাগি, তাম্র বর্ণের উদ্ভেদ।
  • সাইকোটিক- দূষিত সহবাসের পর জননেন্দ্রিয়ে আঁচিল। প্রমেহ বা প্রস্রাবের কষ্ট।
  • টিউবারকুলার- জরায়ুর গঠন বিকৃত। নিদ্রিত হওয়ার পর শয্যায় মূত্রত্যাগ, মূত্রে এলবুমেন, নিদ্রাঘোরে বিনাস্বপ্নে বীর্যপাত। প্রস্রাবদ্বার দিয়া রক্তস্রাব।
যে যে রোগে আক্রান্ত হয় 
  • সোরিক- উদরাময়, পেটফাঁপা, অজীর্ণ, চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ, চক্ষু ও নাসিকা হতে জ্বালাকর স্রাব নিঃসরণ। প্রদাহ ও জ্বালাযুক্ত স্বরভঙ্গ, যে কোন অঙ্গে জ্বালাযুক্ত প্রদাহ। নানা যন্ত্রের শুধু কার্যগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই সোরার কাজ।
  • সিফিলিটিক- পচনশীল যে কোন রোগ, দুর্গন্ধ পুঁজ ও রস নিঃসরণকারী চর্মপীড়া, দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্্রাব ও প্রদরস্রাব। কর্ণ, নাসিকা ইত্যাদিতে ক্ষত ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। প্রস্রাব যন্ত্রের ক্ষত, গলক্ষত। মেরুমজ্জার ক্ষত, অস্থিক্ষয়, মুখে ক্ষত ও দুর্গন্ধ লালাস্রাব। পচন, উদরে ক্ষত, অন্ধত্ব, বধিরতা, উন্মাদ ইত্যাদি।
  • সাইকোটিক- দেহের সকল ছিদ্র পথে যন্ত্রণাদায়ক স্রাব, স্রাব সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা ও ব্যথা, যন্ত্রণাদায়ক স্বরভঙ্গ, কাশি, শুষ্ক জাতীয় হাঁপানি, হুপিং কাশি, হৃদপিন্ডের যন্ত্রণা ও স্নায়বিক দুর্বলতা। মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লি প্রদাহ, বাত, স্নায়ুশূল, উদরশূল, গর্ভস্রাব, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব, অর্শ-ভগন্দর, বসন্ত, আঁচিল, টিউমার হওয়ার প্রবণতা, বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার, অন্ডকোষ প্রদাহ ইত্যাদি।
  • টিউবারকুলার- শুষ্ক জাতীয় দাদ, একজিমা, উন্মাদ, কৃমি, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, যন্ত্রণাবিহীন স্বরভঙ্গ, অন্ধত্ব। দৈহিক শুষ্কতা। মেরুমজ্জার ক্ষয়, কার্বাংকল জাতীয় ফোড়া, শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা, গলা ও স্তনের মধ্যে স্থায়ীভাবে গ্রন্থিস্ফীতি, শয্যাক্ষত, পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্ষত, উন্মাদ, মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, সর্দি কাশি, টনসিল ও গলদেশের গ্রন্থি স্ফীতি ইত্যাদি।
আকৃতি
  • সোরিক- কার্যগত পরিবর্তন
  • সিফিলিটিক- ক্ষত সৃষ্টি, ধ্বংস ও পরিবর্তন হয়
  • সাইকোটিক- অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। স্থানিক পরিবর্তন
  • টিউবারকুলার- ধ্বংসাত্মক ও কার্যগত পরিবর্তন
গোসল
  • সোরিক- গোসল করতে চায় না
  • সিফিলিটিক- সামান্য গরম পানি দিয়ে গোসল করে
  • সাইকোটিক- গোসল করতে ভালবাসে
  • টিউবারকুলার- গোসল করতে চায় কিন্তু গোসলে বৃদ্ধি হয়
ক্ষুধা
  • সোরিক- পেট ভর্তি থাকা সত্তে¡ও বার বার খাবার ইচ্ছা। খাওয়া সত্তে¡ও পেট খালি খালি মনে হয়।
  • সিফিলিটিক- খিদে কম বা বেশি কোনটাই সুস্পষ্ট নয়
  • সাইকোটিক- ক্ষুধামন্দা।
  • টিউবারকুলার- বেশ ক্ষুধা বা রাক্ষুসে ক্ষুধা।
পছন্দনীয় খাবার
  • সোরিক- গরম খাদ্য পছন্দ, দুধসহ্য হয় না
  • সিফিলিটিক- ঠান্ডা খাদ্য পছন্দ, দুধ ও মাখন ভালোবাসে
  • সাইকোটিক- অল্প গরম খাদ্য পছন্দ, মশলাযুক্ত খাদ্য বা মাখন সহ্য হয় না
  • টিউবারকুলার- গরম ও শীতল খাদ্য পছন্দ করে, ঠান্ডা দুধ পছন্দ করে
খাদ্য-ইচ্ছা
  • সোরিক- মিষ্টি, টক, মাংস, তরল খাবার, শাক-সবজি, বেশি মশলাযুক্ত, ঘি, মাখনযুক্ত
  • সিফিলিটিক- দুধ, মিষ্টি, রুটি, তরল খাবার, মাংস, লবণ, কফি, ঠান্ডা খাবার
  • সাইকোটিক- লবণ, লবণাক্ত খাদ্যে, ঠান্ডা খাবার, টক, ফল,
  • টিউবারকুলার- দুধ, মিষ্টি, লবণ, চর্বি, ঝাল জিনিস, ফল, ঠান্ডা খাবার, আলু, উত্তেজক দ্রব্যাদি, মাখন, মদ্য
খাদ্য-অনিচ্ছা
  • সোরিক- সিদ্ধ খাদ্য, মাংস, ডিম, দুধ, টক, মিষ্টি, চর্বি, কফি, ফল, রুটি
  • সিফিলিটিক- দুধ, মিষ্টি, রুটি, মাংস, লবণ, কফি, গরমখাবার, চর্বি
  • সাইকোটিক- মাংস, চ, আলু মশলাযুক্ত খাদ্য ও মাখন
  • টিউবারকুলার- মাংস,দুধ, ডিম, টক, কফি ও শাক-সবজি
খাদ্য-অসহ্য
  • সোরিক- দুধ, রুটি, ঠান্ডা পানীয়, চর্বি, গোল আলু, টক, মিষ্টি।
  • সিফিলিটিক- রুটি, কফি, ঠান্ডা খাবার, মিষ্টি, চর্বি, মাংস।
  • সাইকোটিক- কফি, পেঁয়াজ, চর্বি, চা, মাখন, ঠান্ডা পানীয়, মসলাদার খাদ্য, মিষ্টি।
  • টিউবারকুলার- গোলআলু ও শাক-সবজি সহ্য হয় না।
ক্ষমা
  • সোরিক- সহজেই ক্ষমা করতে পারে
  • সিফিলিটিক- ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা করতে পারে না
  • সাইকোটিক- ক্ষমা করতে ইতস্ততবোধ করে ও শর্তারোপ করে
  • টিউবারকুলার- ক্ষমা করে
বৃদ্ধি
  • সোরিক- দিন বা রাত যে কোন সময় বাড়ে।
  • সিফিলিটিক- সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বাড়ে।
  • সাইকোটিক- পূর্বাহ্ণে বা অপরাহ্ণে অর্থাৎ বেলা ৩টা বা রাত ৩টায় বাড়ে।
  • টিউবারকুলার- বর্ষাকালে ও ঝড় বৃষ্টির দিনে, রাত্রিকালে, অন্ধকারে বাড়ে।
কান্না
  • সোরিক- ক্ষণে হাসি, ক্ষণে কান্না
  • সিফিলিটিক- সর্বদা ঘ্যান ঘ্যানে কান্না বা নিশ্চুপ পড়ে থাকে
  • সাইকোটিক- ঘ্যান ঘ্যানে স্বভাব
  • টিউবারকুলার- শিশু নিদ্রাকালে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে
স্মৃতি-শক্তি
  • সোরিক- স্মৃতিশক্তি প্রখর
  • সিফিলিটিক- স্মরণশক্তি ভীষণ দুর্বল
  • সাইকোটিক- স্মরণশক্তির অভাব
  • টিউবারকুলার- স্মৃতিশক্তি কমে আসে
নখ
  • সোরিক- নখের কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নেই। তবে নখে ময়লা থাকে।
  • সিফিলিটিক- নখ কাগজের মতো পাতলা, সহজেই ভেঙ্গে যায়।
  • সাইকোটিক- নখ অসম, ফাঁটা ও বিবর্ণ। নখকুনি সুচ ফোঁটা ব্যথা, অঙ্গুলহাড়া
  • টিউবারকুলার- নখভঙ্গুর, ফাঁটা ও কোকড়ান, নখের বিভিন্ন স্থানে সাদা সাদা দাগ।
চর্ম
  • সোরিক- ত্বক অপরিচ্ছন্ন, শুষ্ক, খসখসে, উদ্ভেদপূর্ণ বা উদ্ভেদশূন্য, জ্বালা। মাছের আঁশের মত উদ্ভেদ এবং বার বার চর্মরোগ প্রবণতা। চুলকানি।
  • সিফিলিটিক- ত্বকের যাবতীয় ক্ষত। ফোঁড়া ইত্যাদি ঘা সহজে সারে না। গ্রন্থিবৃদ্ধি ও প্রদাহযুক্ত। তাম্র বর্ণের যাবতীয় চর্মপীড়া। ক্ষতপ্রবণতা।
  • সাইকোটিক- বিসর্পজাতীয় চর্মপীড়া। আঁচিল, টিউমার।
  • টিউবারকুলার- চর্ম তৈলাক্ত, কাল দাগ পরে, গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি, দাদ। মশা, মাছি বা ছাড়পোকার কামড়ে স্থানটি পেকে ওঠে। পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ।
পার্শ্ব
  • সোরিক- শরীরের যে কোন দিকে আক্রমণ করে।
  • সিফিলিটিক- ডানদিকে আক্রমণ করে।
  • সাইকোটিক- বামদিকে আক্রমণ করে।
  • টিউবারকুলার- সর্বত্র আক্রমণ করে।
হিসাব
  • সোরিক- হিসাব করার সময় খেয়াল করে না ঠিক হলো কি ভুল হলো। আলস্যে ও দ্রুত শেষ করার প্রচেষ্টা।
  • সিফিলিটিক- চিন্তাশক্তির অক্ষমতার জন্য হিসাব-নিকাশে অক্ষম।
  • সাইকোটিক- বারবার মিলিয়ে দেখে ভুল হলো কিনা।
  • টিউবারকুলার- মাঝে মাঝে খুবই ভাল হিসাব করে আবার কখনও চিন্তাশক্তির অক্ষমতার জন্য হিসাব-নিকাশে অক্ষমতা দেখায়।
জননযন্ত্র:
  • সোরিক- স্বপ্নদোষ। জননযন্ত্রের দুর্বলতা।
  • সিফিলিটিক- লিঙ্গমুন্ডে শক্ত বা নরম ক্ষত। সঙ্গমে অক্ষমতা।
  • সাইকোটিক- জননযন্ত্রের আঁচিল, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, গনোরিয়া, আকারগত পরিবর্তন।
  • টিউবারকুলার- অবৈধ উপায়ে শুক্রক্ষয়ের প্রবণতা, প্রস্রাব করার সময় ক্ষয়।
মন
  • সোরিক- মন চঞ্চল ও পরিবর্তনশীল। সহজেই হাঁসে, কাঁদে, উত্তেজিত ও অবসন্ন হয় কখনও কামভাব আবার পরক্ষণেই বৈরাগ্য।
  • সিফিলিটিক- মুর্খতা, অজ্ঞতা, বোকামি, একগুয়েমি ও নৈরাশ্য। সব সময় তিক্ততা, অতৃপ্তি। বুদ্ধির খর্বতা।
  • সাইকোটিক- সন্ধিগ্ধমনা, সঙ্কোচপরায়ণ। গোপনপ্রিয়, মিথ্যাবাদী, আত্মবিশ্বাস বা অপরের প্রতি বিশ্বাসের অভাব। সন্দেহবশে রাতে উঠে দরজার খিল পরীক্ষা করে।
  • টিউবারকুলার- নিত্যনতুন অভিরুচি, যেন কিছুতেই শান্তি নাই, নিত্যনতুন আকাক্সক্ষা, অত্যন্ত ক্রোধপরায়ণ, বিষন্নতা।
ভয়
  • সোরিক- নানা ভয় উৎকণ্ঠা আশঙ্কা ও হতাশা। রোগাক্রান্ত হলে মৃত্যু ভয়।
  • সিফিলিটিক- কুকুরের।
  • সাইকোটিক- অন্ধকারের।
  • টিউবারকুলার- ভয় বিশেষত কুকুর বা অন্য জন্তুর।
 আত্মহত্যার ইচ্ছা
  • সোরিক- রোগমুক্তি সম্বন্ধে আশাহীন।
  • সিফিলিটিক- আত্মবিতৃষ্ণায় আত্মহত্যার ইচ্ছা। খুন করতেও দ্বিধা করে না।
  • সাইকোটিক- অনুতাপে আত্মহত্যার ইচ্ছা।
  • টিউবারকুলার- আশাপূর্ণ ও নির্ভীক বা গর্বিত।
দেখতে কেমন
  • সোরিক- মুখমন্ডলের বিবর্ণতা ও চক্ষুদ্বয়ের উজ্জ্বলতার অভাব, মুখমন্ডলের লাবণ্যহীনতা
  • সিফিলিটিক- বিকলাঙ্গ, আবার অনেকের দেহ শুকিয়ে যায়।
  • সাইকোটিক- রক্তস্বল্পতার কারণে মুখমন্ডল মলিন ও ফ্যাকাসে দেখায়।
  • টিউবারকুলার- যথেষ্ট খাবার গ্রহণের পরেও কোন কারণ ছাড়াই শীর্ণতা।
দাঁত
  • সোরিক- দাঁত ওঠার সময় উদরাময় বা অন্য পীড়ায় দুধ হজম হয় না।
  • সিফিলিটিক- দাঁত ক্ষয়ে যায়, আমাশর প্রবণতা।
  • সাইকোটিক- দাঁত পোকায় খাওয়া বা দাঁত বেরিয়ে ওঠে, সহজেই সর্দি কাশি হয়।
  • টিউবারকুলার- দাঁতগুলো শিশুকালেই পচে যাওয়া শিশু ভয়ানক খিটখিটে ও ঘ্যানঘ্যান করে।
শিশু চরিত্র
  • সোরিক- শিশু চর্মরোগসহ জন্ম হয়। জন্মের পর প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়।
  • সিফিলিটিক- ক্ষতসহ জন্ম। নাভি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। চোখে ক্ষত।
  • সাইকোটিক- যে কোন প্রকারের অসম বৃদ্ধিসহ জন্ম। বৃদ্ধি জনিত বিকলাঙ্গ শিশু।
  • টিউবারকুলার- শিশুর জন্মকালে বংশগত ক্ষয়রোগের ইতিহাস থাকে।
মেধা
  • সোরিক- শিশু সুলভ চপলতা থাকে। পড়াশুনায় পটু। একবার বলে দিলেই বুঝতে পারে। অক্ষর পরিচয়ের সময় লেখা লিখতে বুঝাতে হয় না, দেখে দেখেই লিখতে পারে।
  • সিফিলিটিক- হাবলা গোছের ভাব খেলতে চায় না। ক্ষুধার অভাব, খাওয়ার জন্য বারবার বলতে হয়। রাতে খাইয়ে না দিলে খায় না। ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়াতে হয়। বিনা চিকিৎসায় রক্তপাত বন্ধ হয় না, বহুদিন জের থেকে যায়। একরোখা, জেদী, রাগলে শান্ত করা যায় না।
  • সাইকোটিক- শিশুসুলভ চপলতার সঙ্গে ভীরুতা ও গোপনীয়তা। একা একা খেলা করার ইচ্ছা। ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গমের প্রবৃত্তি।
  • টিউবারকুলার- চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীলতা, শিশুর এক খেলনায় দীর্ঘ সময় খেলা করিতে ভাল লাগে না। এক প্রকার খাদ্য দীর্ঘ দিন খেতে ভাল না লাগা। গৃহকর্মী হলে নিত্য নতুন বেশ-ভূষার আকাক্সক্ষায় গৃহকর্তাকে পাগল করে।
বেদনা
  • সোরিক- খেলে ও শীতকালে বাড়ে। গরমে ও সামান্য চাপে কমে।
  • সিফিলিটিক- সূর্যাস্তের পর থেকে ভোর পর্যন্ত বাড়ে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ও বারবার স্থান পরিবর্তনে কমে।
  • সাইকোটিক- যাবতীয় যন্ত্রণা বিশ্রামে, ভিজা ঠান্ডা ও বর্ষকালে বাড়ে। নড়াচড়ায় শীতকালে, সূর্যাস্তের পর থেকে ভোর পর্যন্ত কমে।
  • টিউবারকুলার- বর্ষাকালে ও ঝড় বৃষ্টির দিনে বৃদ্ধি, রাত্রিকালে ভয়াবহ বৃদ্ধি, অন্ধকারে থাকতে ভয় বা বৃদ্ধি। শুষ্ক আবহাওয়ায় ও মুক্ত বাতাসে উপশম।
মল
  • সোরিক- অতিভোজনের ফলে উদরাময়। সকালে বাড়ে। গরমে ও চাপে বেদনা কমে। দারুণ কোষ্ঠকাঠিন্য ও শক্ত মল।
  • সিফিলিটিক- গুহ্যদ্বারে ক্ষয়। মলত্যাগের পর অস্থিরতা।
  • সাইকোটিক- উদরাময় বা আমাশয়ের সঙ্গে পেট ব্যথা হলে কেঁদে ফেলে, উদরাময়, অর্শ, ভগন্দর প্রকৃতি, মল পরিবর্তনশীল।
  • টিউবারকুলার- নি¤œ উদরে শূন্যতার অনুভূতি, উদরাময়ের সাথে মস্তিষ্ক আক্রান্ত। শিশু জন্মের পর হতে ২/৩ বৎসর বয়স পর্যন্ত যখন তখন উদরাময়।
প্রস্রাব
  • সোরিক- প্রস্রাব বন্ধ, কাশতে কাশতে, হাঁচিতে হাঁচিতে অসাড়ে প্রস্রাব। প্রস্রাব জ্বালাকর। সাদা ফসফেট ও মরিচা রঙের প্রস্রাব।
  • সিফিলিটিক- যন্ত্রণাবিহীন মূত্রকৃচ্ছতা। বারবার প্রস্রাবের তীব্রতা ও
  • ক্ষয়কারীভাব।
  • সাইকোটিক- মূত্রনালী সঙ্কুচিত, প্রস্রাব ও প্রস্রাবকালীন যন্ত্রণা। একশিরা, মূত্র পাথরি ও মূত্রকোষের যাবতীয় রোগ।
  • টিউবারকুলার- বহুমূত্র, মূত্রপচা বা ভ্যাপসা গন্ধযুক্ত। স্বচ্ছ জলের ন্যায়
  • বর্ণশূন্য প্রচুর প্রস্রাব।
হৃৎপিন্ড
  • সোরিক- হৃৎপিন্ডের রক্তোচ্ছাসের অনুভূতি ও দুর্বলতা। বুকে শূন্যতাবোধ।
  • সিফিলিটিক- হৃৎপিন্ডে ক্ষত বা পচা ঘা।
  • সাইকোটিক- হৃৎপিন্ডের আকারের পরিবর্তন। কাঁধ ও কাঁধের ফলকে বেদনা। বাত চাপা পড়ে হৃদরোগ।
  • টিউবারকুলার- রক্ত সঞ্চালন কার্যের বিশৃঙ্খলা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন। শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর। নাড়ী দ্রুত।
মাথা
  • সোরিক- মাথাঘোরা । সকালে উত্তাপ ও রোদ বাড়ার সঙ্গে বাড়ে। স্থিরভাবে বসে বা শুয়ে থাকলেও রোদের তাপ কমার সঙ্গে কমে।
  • সিফিলিটিক- মাথাব্যথা রাতে বাড়ে। নড়াচড়া ও গরমে বাড়ে। ঠান্ডা দিলে কমে। অচিররোগের পর চুল ওঠা। মাথায় মরামাস ও দুর্গন্ধ পুঁজ স্রাবের চর্মপীড়া। মাথা আকারে বড়।
  • সাইকোটিক- বৃত্তাকারে মাথার চুল ওঠে, টাক পড়ে। মাথায় ঘামসহ শুকনো চর্মপীড়া ও আঁচিল। মাথাব্যথা মাঝরাতে বাড়ে। নড়াচড়ায় কমে।
  • টিউবারকুলার- চুলগুলো ফাঁটাফাঁটা, রুক্ষ, কর্কস এবং চুলে জটা বাঁধা। মস্তকে দাদ ।
কর্ণ
  • সোরিক- কর্ণগহ্বর শুষ্ক ও খসখসে।
  • সিফিলিটিক- দীর্ঘাকৃতি কান, দুর্গন্ধ যুক্ত কানের পুঁজ। সামান্য ঠান্ডা লাগা ও সর্দিতে কান পাকে। উদ্ভেদযুক্ত পীড়ায় কান পাকে।
  • সাইকোটিক- কান পাকে, আঁশটে গন্ধযুক্ত, পুঁজের আকারগত পরিবর্তন, শ্রবণ শক্তির হ্রাস বা বিলোপ।
  • টিউবারকুলার- কর্ণশুল, কানের পুঁজ, শিশুদের ঘন ঘন কর্ণে স্ফোটক হওয়ার প্রবণতা।
চক্ষু
  • সোরিক- কাজের চাপে চোখের বিশৃঙ্খলা। সকালে সূর্যতাপে বাড়ে। কিন্তু গরম দিলে কমে। নানা রং দেখে।
  • সিফিলিটিক- চোখের পাতায় ক্ষত। আলোকভীতি, পক্ষাঘাত ও স্নায়বিক যন্ত্রণা, চক্ষুরোগজনিত জ্বর, রাতে ও গরমে বৃদ্ধি।
  • সাইকোটিক- ঋতু পরিবর্তনে ও বর্ষায় রোগ বাড়ে। অন্ধত্ব ও চোখের আকারগত পরিবর্তন।
  • টিউবারকুলার- অঞ্জনি জাতীয় চক্ষু পীড়া। পুরাতন চক্ষুক্ষত, আলোকভীতি। মাথা ঘোরার সাথে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস। চোখের ব্যথা রাতেবৃদ্ধি।
চিন্তা ধারা 
  • সোরিক- অসামঞ্জস্য পূর্ণ নানা রকম কাল্পনিক চিন্তা, লোকসঙ্গে ভীতস্পৃহা। নির্জন বিলাসী। নিজে না করলেও পরকে জ্ঞান দিতে বেশি আগ্রহী। মুখোশ পরা দার্শনিক।
  • সিফিলিটিক- মেলা মেশার অক্ষমতা। সব সময় মুখ বুজে থাকে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কথা বলে। হঠকারিতা ও মুর্খতা।
  • সাইকোটিক- একই কথা বারবার বলে। নিজের স্ত্রী ও কন্যার প্রতিও সন্দেহ। হিংসা ও ক্রোধভাব, তুচ্ছ কারণে কলহ করে।
  • টিউবারকুলার- ভবঘুরে, অস্থিরতা, সামান্যক্ষণ মনোসংযোগ করতে পারে না। মন সর্বক্ষণ যেন উড়ে বেড়ায়।
চেহারা
  • সোরিক- ঠোট দুটি নীলাভ, আরক্তিম ও শুষ্ক। জিহ্বা ও মাঢ়ীতে জ্বালা। ভূক্ত দ্রব্যের গন্ধ।
  • সিফিলিটিক- মুখমন্ডল তৈলাক্ত, চকচকে চর্বি মাখানো ও গোল।
  • সাইকোটিক- মুখমন্ডল মৃত ব্যক্তির মত নীলাভ শোথগ্রস্ত।
  • টিউবারকুলার- ওষ্ঠদ্বয় হতে রক্ত বের হবার উপক্রম, সীমাবদ্ধ স্থানে লাল দাগসমূহ।
হাত ও পা
  • সোরিক- হাত ও পায়ের কার্যগত বিশৃঙ্খলা।
  • সিফিলিটিক- হাত ও পায়ের লম্বা হাড়ে ব্যথা। বিশেষ করে রাতে, অস্থিপুষ্টির অভাব।
  • সাইকোটিক- নানা ধরনের বাত, অসাড়তা ও শক্তিহীনতা, সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তি, হঠাৎ হাত পা মচকে যাওয়া।
  • টিউবারকুলার- অস্থিসমূহ সহজে শক্ত হতে চায় না। শিশুরোগী অনেক দেরিতে হাঁটতে শেখে। বৃদ্ধ রোগীর প্রায়ই পক্ষাঘাত।
মুখ গহ্বর
  • সোরিক- পানির পিপাসা, টনসিল বৃদ্ধি, দুর্গন্ধযুক্ত লালা। মুখে বিস্বাদ বা মিষ্টি স্বাদ তিক্ত ও অল্প স্বাদ।
  • সিফিলিটিক- ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত, মাড়িতে স্ফোটক ও পুঁজ জমে। মাড়ির গোড়া আলগা, মুখে দুর্গন্ধ। জিহ্বায় দাঁতের ছাপ। জিহ্বা ভিজা অথচ প্রবল পিপাসা। টনসিল বৃদ্ধি ও মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরণ। মুখে ধাতব স্বাদ।
  • সাইকোটিক- মুখের স্বাদ ও গন্ধ আঁষটে। জ্বালাকর তীব্র পিপাসা। হলদে, স্ফীত ফাঁটলযুক্ত জিহ্বা। মুখগহবরের গ্লান্ডগুলো স্ফীত ও শক্ত হয়।
  • টিউবারকুলার- দন্তমাড়ি ও মুখগহ্বর হতে প্রচুর পরিমাণে উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্তস্রাব। দাঁত মাজার সময় মাঢ়ী হতে রক্তস্রাব, দন্তক্ষয় এবং দাঁতের অস্বাভাবিক গঠন, পুঁজ ও রক্তের স্বাদ।
নাক
  • সোরিক- সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ কোনটাইসহ্য হয় না। অনেক রকম গন্ধে মুর্চ্ছা যায়।
  • সিফিলিটিক- প্রায়ই সর্দি লাগে। এ জন্য নাক সুড়সুড় করে। নাকে মামড়ি ও চটা পড়ে। দুর্গন্ধ নিঃশ্বাস।
  • সাইকোটিক- ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়, মাছের গন্ধযুক্ত স্রাবসহ ক্ষত, সবুজাভ হলুদ স্রাব, অস্বাভাবিক স্রাবে উপশম।
  • টিউবারকুলার- সর্দিস্রাব ঘন, হরিদ্রাবর্ণের পচা পনিরের গন্ধযুক্ত, সামান্য কারণে ঠান্ডা লাগে।
শ্বাসকষ্ট
  • সোরিক- চর্মরোগ চাপা পড়ে শ্বাসকষ্ট। কাশির চোটে মাথাব্যথা ও খিটখিটে মেজাজ। বিরক্তিভাব।
  • সিফিলিটিক- লবণাক্ত ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত কফ।
  • সাইকোটিক- প্রচুর শ্লেষ্মাক্ষরণ, রাত্রিকালীন হাঁপানি । শ্বাসকষ্ট হলে পায়চারি করতে হয়। চাপলে কমে।
  • টিউবারকুলার- বুকটি অপ্রশস্ত ও সরু। কাশি গভীর, নিউমোনিয়া।
স্বপ্ন
  • সোরিক- উৎকণ্ঠার, ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের, মৃতব্যক্তির, প্রস্রাব বা পায়খানা করছে স্বপ্ন দেখে।
  • সিফিলিটিক- বিভীষিকাময় যেমন-হত্যাকান্ড, অগ্নিকান্ডের, ভীতিকর, বন্দুক ছোঁড়ার, পানির, বিয়ের, জন্তুর কামড়।
  • সাইকোটিক- উড়ে যাওয়া, পড়ে যাওয়া বা মৃত ব্যক্তির, দুর্ভাগ্যের, বিয়ের, মৃতদেহ, মানসিক পরিশ্রমের, দুর্ঘটনার।
  • টিউবারকুলার- নৈশকালীন স্বপ্নে তাদের অন্তর্জগতের প্রতিফলন দেখা যায়। ভ্রমণ, দলগত উৎসব, বিবাহ অনুষ্ঠান অথবা ভীতি ও উদ্বেগপূর্ণ কিংবা প্রথমে জলজ্যান্ত স্বপ্ন দেখে।
স্ত্রীরোগ
  • সোরিক- মাসিক ঋতুস্রাবের যাবতীয় বিশৃঙ্খলা, ক্ষয়কারী ভাব থাকে।
  • সিফিলিটিক- যোনি থেকে দুর্গন্ধ স্রাব। সুতোর মতো লম্বা স্রাব। ঋতুস্্রাব শেষে মুর্চ্ছা।
  • সাইকোটিক- জরায়ু ডিম্বাধার ও ডিম্বনালীর প্রদাহ, বন্ধ্যাত্ব, জ্বালাযুক্ত ঋতুস্রাব, স্তনদ্বয়ে ব্যথা, পচা মাছের গন্ধযুক্ত জমাট বাঁধা স্রাব। সব সময় যৌনচিন্তা।
  • টিউবারকুলার- প্রদরস্রাব, বাধক, মাথাঘোরা, দুর্বল, প্রচুর দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাব প্রবাহ, জরায়ু প্রলাপস, প্রসব সহজে ও অল্প সময়ে হয় না।
গর্ভ
  • সোরিক- গর্ভাবস্থায় বমি বমিভাব, মাথাঘোরা, কাশি কফ, টক পানি ওঠে।
  • সিফিলিটিক- অপরিণত শিশুদের জন্ম বা গর্ভ নষ্ট, মৃত সন্তান প্রসব।
  • সাইকোটিক- গর্ভবতী মহিলার ব্যভিচার, গর্ভাবস্থায় সর্দি লাগে, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, উচ্চরক্তচাপ, কষ্টদায়ক গর্ভাবস্থা ও অস্বাভাবিক প্রসব। ভ্রান্তগর্ভ, গর্ভনষ্ট, অপরিণত শিশুর জন্ম।
  • টিউবারকুলার- প্রসবকালীন যন্ত্রণা কষ্টকর, ভয়ানক এবং দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী এবং পরিশ্রান্ত। অনেকেই তাদের সন্তানকে স্তন্যপান করাতে পারে না।

মন - মানুষিকতা

সোরিক -মন 
  • পবিত্র চিন্তা বা একনিষ্ঠ চিন্তা ও ধ্যান ধারণার অক্ষম। অনুচিত জেনেও সে কাজ না করে থাকতে পারে না। অন্তরে স্বার্থপরতা বাইরে উদারতার ভান।
  • ধনী ব্যক্তির জীর্ণবাসে গর্ব অনুভব। নিজের মল-মূত্র ঘ্রাণের প্রবৃত্তি, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন্। চঞ্চল ও অস্থির । অপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র আকাক্সক্ষা, মনোবিকৃতি, শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে অক্ষমতা, অলস, পূর্ণিমা ও প্রতিপদে মানসিক লক্ষণের বৃদ্ধি। ঋতু স্রাবের কাছাকাছি সময়ে মানসিক লক্ষণে বৃদ্ধি।
  •  উৎপাত করে, শীতকাতর, ঈর্ষাপরায়ণ। কৃমি থাকে, রাতে গায়ের ঢাকনা খুলে ফেলে দেয়। কফ চেটে খাওয়ার অভ্যাস।
  • সর্ববিষয়ে হাহুতাশ করে। মানসিক অস্থিরতা বা অস্বাভাবিক মানসিক লক্ষণ, শীতকাতর, গাড়িবাড়ি করে ও আরও অধিক সম্পত্তির জন্য চিন্তা এবং তাতেই বিভোর। স্ত্রীর জন্যও খরচ করতে চায় না। নিজের জন্য যথাসম্ভব ব্যয় করে। সংসারের খরচ বেশি হলে বিরক্ত হয়। ওষুধের জন্য সহজে খরচ করতে চায় না। সংসার ভেঙ্গে আলাদা হয়ে যায়। পুত্রবধুকে আপন করতে পারে না। ভ্রমণবিলাসী তীর্থবাসী।
  • যৌনমিলনে ভয়। নারীর প্রতি ভীতি ভাব। বৈরাগ্য, কুমতলব, সংসারী হওয়ার পরেও অধিক বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করে।
  • ধর্মোন্মত্ততা, কৃপণ বা অত্যাধিক খরচের ভয়। জীর্নবাসে গর্ববোধ। অপরকে জ্ঞান দেওয়ার প্রবৃত্তি, নিজে কিছুই করে না। নিজেকে বড় ভাবে, বাচাল, কুচিন্তা, চতুর।
  • ঈর্ষার বৃদ্ধি, যেনতেন প্রকারে কার্যসিদ্ধির চিন্তা। আত্মভোলা, মানসিক বিভ্রান্তি, ধৈর্য্যচ্যুতি, উৎকণ্ঠা ও মনোরোগ।
সিফিলিটিক - মন
  • নির্বোধ, অজ্ঞ। কোনটি গ্রহণীয় কোনটি বর্জনীয় বিবেচনা করতে পারে না।
  • নিজ পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালনে অক্ষম চিন্তা শক্তির অক্ষমতা। আত্ম- বিশ্বাসের অভাব। কোন কথা বোঝার অক্ষমতা। কিছুক্ষণ পরে তার মনে বোঝার অক্ষমতা।
  • কৈশোরে চঞ্চলতার অভাব, বিমর্ষভাব। সহজে কিছুই বুঝে না। নির্বোধ, একটা পড়া বারবার পড়ে কিন্তু বুঝতে পারে না। হাজার শাস্তি দিলেও কোন ফল হয় না। বরং অপকারই হয়। নিজের ভাল মন্দ বোধটুকুও থাকে না। খাওয়ার সময় সাধতে হয়। খেলার প্রতি বিশেষ ঝোক থাকে। বর্শি দিয়ে মাছ ধরার ঝোক। কিটপতঙ্গ মারতে ওস্তাদ। হাতের লেখা অস্পষ্ট। অংক একবারেই পারে না। মা হওয়ার প্রবণতা।
  •  বিমর্ষতা, অনুতাপ, জীবনে কিছুই করতে না পারায় অনুতপ্ত ও আত্মহত্যা করার প্রবল ইচ্ছা। কখনও কখনও আত্মহত্যা করে বসে।
  • নারী সঙ্গ স্পৃহা, বেপরোয়াভাব, নানাভাবে জৈবিক তৃপ্তির কুফল জনিত রোগ। যৌনাকাঙ্খাহীন, সঙ্গমে অক্ষমতাজনিত বিতৃষ্ণা। জননাঙ্গে ক্ষত, বন্ধ্যাত্ব। বির্মষ, তামাক এবং মাদকদ্রব্যে স্পৃহা, কুসঙ্গ বা অসৎ সঙ্গে পড়া। বিচার বিবেচনার অক্ষমতা। বিবেকহীন ও পশুপ্রবৃত্তি। অপরকে হত্যার ইচ্ছা বা হত্যা করা। পৃথিবী ভালো লাগে না।
সাইকোটিক - মন
  • ভ্রান্ত ধারণা খুঁতখুঁতে শুচিবায়ুগ্রস্থ। পরছিদ্রান্বেষী, পরিবর্তনশীলতা, ধৈর্যহীনতা। সৎ চিন্তার অভাব, অতিরিক্ত অস্থিরতা।
  • প্রবঞ্চক, চিবিয়ে ধীরে ধীরে কথা বলে, স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে, ক্ষণস্থায়ী বিস্মরণ, সাম্প্রতিক ঘটনা ও পরিচিত লোকের নাম বিস্মরণ, মনের নীচতা গোপনের আকাক্সক্ষা। ভীতিভাব। সন্ধিগ্ধচিত্ত। অসন্তোষ এবং চাঞ্চল্যসহ স্মৃতিশক্তির বিশৃঙ্খলা। সবসময় স্ত্রী লোকের চিন্তায় মনটি ভরে থাকে। ঝড়বৃষ্টির সময় ও ঋতু পরিবর্তনে বৃদ্ধি।
  • গরমকাতর। সর্দি কাশি হাঁপানি ও বাতের ব্যথা বর্ষায় বৃদ্ধি। লিঙ্গটি নিয়ে আপন মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে।
  • হাঁপানি বা শ্বাস যন্ত্রের কষ্ট, পুত্র, কন্যা বা পুত্রবধুদের প্রতি সন্দেহ, অর্থ গোপনের তীব্র অভিলাস।
  • অধিকমাত্রায় গোপনে অবৈধভাবে শুক্রক্ষয়ের আকাক্সক্ষা, গনোরিয়া রোগ, মেয়েঘেষা, সর্বদা মেয়েদের সম্পর্র্কে বা যৌন সংসর্গের উদ্ভট কল্পনা। গোপনে নারী অঙ্গ দর্শনের তীব্র লালসা, পশু পাখির যৌনক্রীড়া বা অশ্লীল সিনেমা বা চিত্র দর্শনের এবং যৌনসংক্রান্ত নভেল পাঠের স্পৃহা।
টিউবারকুলার - মন
  • কর্মভীতি, অসহিষ্ণুতা বা অধৈর্য, মানসিক চাঞ্চল্য, পরিবর্তনশীলতা।
  • ক্রোধপরায়ণ, অসহিষ্ণু, চঞ্চল ও পরিবর্তনশীল মেজাজ।
  • প্রচন্ড চঞ্চলতা, শুকিয়ে যাবার প্রবণতা, আশাবাদি, চিন্তা শূন্যতা, উদাসিনতা।
  • পেশা এবং চিকিৎসক পরির্বতন চায়। আরোগ্য সম্বন্ধে সর্বদাই আশান্বিত। অভ্যাস দ্রুত পরির্বতন করে, নিজের রোগের গুরুত্ব সম্পর্র্কে উদাসীন ও ভ্রুক্ষেপহীন।
  •  অসংযমপূর্ণ জীবন যাত্রার অভ্যাস। অবৈধ উপায়ে শুক্রক্ষয়, অত্যাধিক কর্মস্পৃহা মনে সদা জাগ্রত থাকে।
  • পরিশেষে প্রস্রাব করার সময়, মলত্যাগকালে বা সামান্য মানসিক উত্তেজনায় বা অবসাদে বীর্য আপনা হতেই অসাড়ে পড়ে। ফলে মনটি সব সময় উৎসাহ শূন্য, বিষন্ন ও নিরুৎসাহ হয়ে পড়ে এবং স্মৃতিশক্তি কমে আসে।

স্বভাব - চরিত্র 

সোরিক স্বভাব - চরিত্র 
  • গোসল করতে চায় না। দুধে অনীহা। মিষ্টি দ্রব্যে স্পৃহা। নোংরা থাকা স্বভাব। নিজের মলমূত্র শোকে। যা পায় মুখে দেয়। ব্যবসা ব্যবসা খেলাতে ঝোঁক বেশি। খিদে প্রচন্ড, মিশতেও পারে তাড়াতাড়ি রাগ করলেও সহজেই শান্ত হয়। চর্মরোগ, প্রচন্ড চুলকানি। হাত মুখ না ধুয়ে খেতে বসে। ধুলো বালি নিয়ে খেলা করে।
  • সুখের, মান অভিমান ও চাঞ্চল্য ভরা অস্বাভাবিক আকাক্সক্ষা ও কামনার অপরিতৃপ্তিজনিত মনক্ষুন্নতা, নারী শ্বাশুড়ীর সঙ্গে ঝগড়া করে, অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়
সিফিলিটিক স্বভাব - চরিত্র 
  • অতি গরম বা অতি শীত কোনটাইসহ্য হয় না। চোর পুলিশ খেলার দিকে বেশি আগ্রহ। একই পড়া বারবার পড়তে হয়। স্কুল গমনে শিশুর সমস্যা।
  • নারীর গর্ভাবস্থায় দাঁত ব্যথা, মুখক্ষত, মাড়ি ফোলা, দুর্গন্ধ। কষ্টদায়ক গর্ভাবস্থা ও প্রসব।
  • প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তীব্র আকাক্সক্ষা, বাধা এলে তজ্জনিত রোগ।
  • দুঃখপূর্ণ যৌন সমস্যা। বেদনা দায়ক সঙ্গম। সঙ্গমে অক্ষমতাজনিত বিতৃষ্ণা। জননাঙ্গে ক্ষত, বন্ধ্যাত্ব।
সাইকোটিক স্বভাব - চরিত্র 
  • পুতুল বিয়ে বিয়ে খেলা করে। পড়াশোনা করতে অনেক চেষ্টা করতে হয়, নতুবা হয় না। রেগে গেলে সহজে ভুলে না। এটা দিতে হবে ওটা দিতে হবে এরকম আবদার করে। বারে বারে অল্প অল্প খেতে চায় । খুত খুতে স্বভাব। এটা খাবে না ওটা খাবে না বলে জিদ করে। হাঁটা-চলা বা কথা বলতে দেরি হয়। গোসলে স্পৃহা কিন্তু সহজেই ঠান্ডা লাগে।
  • সংসার সুখের হয় না, বন্ধ্যা, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান, পুত্রশোকে স্বামী-স্ত্রীতে অসদ্ভাব, সর্বদা কলহ, পারস্পরিক সন্দেহ, অত্যাধিক যৌনাকাক্সক্ষা, যৌন অতৃপ্তি, বহুক্ষেত্রে পুরুষের।
  • প্রেমে আসক্তি, অপাত্রে প্রেম, অবৈধ প্রেম, বন্ধুত্ব। যৌনচারের ফলশ্রæতিরূপে যৌনশক্তি হ্রাস। অত্যধিক জৈবিক তৃপ্তির কুফলজনিত রোগ।
টিউবারকুলার স্বভাব - চরিত্র 
  • নির্দিষ্ট একটি বিষয় নিবিষ্টভাবে চিন্তা করা আশা করা যায় না। ছাত্র রোগী কিছুদিন বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করে পুনরায় কলা বিষয়ে আকৃষ্ট হয় ও তার পরে আবার একটি নতুন বিষয়ে অনে¦ষণ করে। রোগী পরিবর্তনশীল আচরণ করে। রোগী ঠান্ডা পছন্দ করে, কিন্তু ঠান্ডায় তার বৃদ্ধি।
  • উদাসীনতা, জীবনে বিতৃষ্ণা ও নিজ জীবন নষ্ট করার প্রবৃত্তি, স্বার্থপর। যে খাদ্য হজম করিতে পারে না সেই খাদ্যে আকাক্সক্ষা। আশাবাদী।
  • বন্ধ্যাত্ব, ২/১ টি প্রসবের পর তাদের জরায়ু নানা জাতীয় স্থানচ্যুতি বা বহিনির্গমন, দিনের পর দিন প্রসব বেদনাটি চলতে থাকে। প্রসব করার শক্তি কমতে থাকে।

যা যা জেনেছেন 

  • সিফিলিটিক মায়াজম
  • ঔষধের প্রথম শ্রেণির লক্ষণ ও মায়াজম
  • ক্রনিক মায়াজম
  • সোরা মায়াজম
  • মিশ্র মায়াজম
  • সোরা মায়াজম কি
  • সিফিলিস মায়াজম
বিস্তারিত

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

হোমিওপ্যাথিতে প্রতিষেধক ও মহামারীতে রোগীর লক্ষণ ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন চিকিৎসা ব্যবস্থা

প্রতিষেধক ঔষধ নির্বাচন করা হয়ে থাকে যে কোন মহামারীতে (মহামারীর প্রাইমারী স্টেজে) আক্রান্ত দশ জন বা বিশ জন রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করে যে কয়টা লক্ষণ কমন থাকে অর্থাৎ প্রায় সকলের মধ্যেই পাওয়া যায় সেই লক্ষণের উপর ভিত্তি করে। চিকিৎসক কর্তৃক পর্যবেক্ষিত কমন (যে কয়টি লক্ষণ সকলের ম‌ধ্যেই দৃষ্টিগোচর হয়) লক্ষণ গুলো হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটি সুস্থ মানবদেহে উৎপাদন করতে সক্ষম সেই ঔষধটিই হবে উক্ত মহামারীর জন্য যথার্থ প্রতিষেধক ঔষধ। 

মহামারীতে আক্রান্ত রোগীর বা রোগীদের সেকেন্ডারী স্টেজের লক্ষণ বা কনস্টিটিউশনাল সিম্পটম অর্থাৎ ধাতুগত লক্ষণ নিয়ে সঠিক প্রতিষেধক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।  তবে সেকেন্ডারী স্টেজে যদি প্র‌তি‌টি রোগী‌কে স্বতন্ত্রভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাদের লক্ষণ সমষ্টি অনুযায়ী একক ঔষধ সূক্ষ্ম মাত্রায় রোগীকে প্রদান করা যায় তাহলে অবশ্যই রোগী পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।

মহামারী (Epidemic) :  মড়ক, যে সংক্রামক রোগে বহু লোক মৃত্যুবরণ করে। সংক্রামক রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে একটি স্বল্প সময়ের মধ্যে, সাধারণত দুই সপ্তাহ বা তার কম সময়ের মধ্যে জনসংখ্যার একটি বৃহৎ সংখ্যক লোককে। উদাহরণস্বরূপ, মেনিংকোকাল ইনফেকশনগুলিতে, প্রতি হেক্টর প্রতি ১০০,০০০ জন লোকের মধ্যে ১৫ টির বেশি ক্ষেত্রে আক্রমণের হার একটি মহামারী বলে মনে করা হয়।

মহামারী রোগে ১৮০১খ্রি. ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান এর সংবিধান "অর্গানন অব মেডিসিন" গ্রন্থ এর এফোরিজম ৩৩ ফুটনোট ১৭ তে হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক আছে ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করে ভাল ফলাফল পেয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। যা ইংরেজি ও বাংলা অনুদিত অংশ সংযুক্ত আছে।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির জনক বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর "দি লেজার রাইটিং" গ্রন্থ এর ৩৭৬-৩৮৩ পৃষ্ঠায় হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তখনকার সময় Scarlet fever এর জন্য তিনি হোমিওপ্যাথি ঔষধ Belladonna প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।

তার দেখানো পদ্ধতি অনুসারে বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহামারীতে ও সম্প্রতি চিকনগুনিয়া জ্বর, ডেঙ্গু জ্বরে হোমিওপ্যাথি প্রতিষেধক ও চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে বিশ্বে মহামারী রুপ ধারণকারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসাবে হোমিওপ্যাথি ঔষধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ পরীক্ষা পরীক্ষামূলক ভাবে দিতে পারেন এবং লক্ষণ ভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও সফল চিকিৎসা প্রদান করা যাবে। 

এছাড়া হোমিওপ্যাথিক লক্ষণ ভিত্তিতে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর অর্গানন অব মেডিসিন, দি লেজার রাইটিং, হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা, হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরী সহ অন্যান্য গ্রন্থের সহায়তায় সফলতার সহিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান করা যাবে।
হোমিওপ্যাথিতে প্রতিষেধক মহামারীতে ঔষধ নির্বাচন
হোমিওপ্যাথি প্রতিষ্ঠার পর হতেই বিভিন্ন মহামারীতে সাফল্যের সাথে চিকিৎসা করে এসেছে এবং তুলনাযোগ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা ধারার তুলনায় তার সফলতা ছিলো আশ্চর্যজনক রকমের বেশি। ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান তার রচনাকৃত হোমিওপ্যাথির মূল গ্রন্থ ‘অর্গানন অব মেডিসিন’-এ মহামারী সম্বন্ধে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন এবং হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি মোতাবেক তিনি কীভাবে এর চিকিৎসা করতে হবে, সে ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন। কেবল তাত্ত্বিক ধারণা নয়, সর্বপ্রথম ১৮০১ সালে স্কারলেট ফিভারের মহামারীতে তিনি বেলোডোনা ঔষধটির রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক সক্ষমতার বাস্তব প্রমাণ দিলেন এবং পরবর্তীতে নেপোলিয়ান আর্মিতে হওয়া টাইফাস মহামারীতে তিনি নিজে চিকিৎসা করে নজির স্থাপন করলেন তার আরোগ্য ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্বের। এরপর থেকে বিগত ২০০ বৎসরে বিভিন্ন এপিডেমিক (মহামারী) তে হোমিওপ্যাথির ফলপ্রসূ ভূমিকার বহু নজির বিদ্যমান। অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ৬ষ্ঠ সংস্করণের ১০০ হতে ১০৪ সূত্রে Epidemic Disease (মহামারী রোগ) বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। মহামারী রোগে প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সফলতার কিছুসংখ্যক দৃষ্টান্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-
  • ১৭৯৯ ও ১৮০১ সালে মহামারী আকারে দেখা দেয়া স্কারলেট ফিভার কিভাবে হোমিওপ্যাথি ঔষধ বেলেডোনা-৩০ প্রয়োগ করে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে রোগীর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
  • ১৮১৩ সালে জার্মানীর টাইফাস ফিভার মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসা ধারায় মৃত্যুর হার ছিল যেখানে ৩০% সেখানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ২%।
  • ৮৩১ সালে অস্ট্রেলিয়ার কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ৪০% থাকলেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১০%।
  • ১৮৪৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির কলেরা মহামারীতে হোমিওপ্যাথির সাফল্য ৯৭% প্রচলিত চিকিৎসায় সাফল্য ৯৭% প্রচলিত চিকিৎসায় সাফল্য ছিল মাত্র ৪০% থেকে ৫০%।
  • ১৮৫৪ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৫৯.২% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৯%।
  • ১৮৫৫ সালে আফ্রিকার রিও-র কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৪০% থেকে ৬০% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ২%।
  • ১৮৬২ থেকে ১৮৬৪ সালের নিউইয়র্ক ডিপথেরিয়ার সংক্রমণে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৮৩.৬% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১৬.৪%।
  • ১৮৭৮ সালে আমেরিকার ইউলো ফিভার মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ১৫.৫% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৬%।
  • ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ২৮.২% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ১.০৫%।
এছাড়া ১৯৭৪ সালে ব্রাজিলের ম্যানিনজাইটিস, ১৯৭১ সালের ভারতের জাপানিজ এনসেফালাইটিস, ২০০৭ সালে কিউবার ল্যাপটোস্পাইরোসিস এবং ২০০৯ সালে ভারতের সোয়ান ফ্লু ইত্যাদি রোগ মহামারী (Epidemic) আকারে দখা দেবার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে হোমিওপ্যাথির সফলতা ছিল শীর্ষে। মৃত্যুর হার ছিল না বললেই চলে।

স্মরণকালের ডেঙ্গু জ্বর ও চিকনগুনিয়া জ্বর রোগের প্রার্দুভাবেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সাফল্য রয়েছে।

১৯৯৫ সালে কিউবাতে কেরাটোকঞ্জাকটিভকইটিস রোগে ও ২০০৭ সালে ভারতের কেরালাতে চিকনগুনিয়া রোগে হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারী আশা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিবিসি- বাংলা যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% লোক নিয়মিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে।

সেখানে জেনারেল স্ট্যাটিসটিকস, বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয়া কলেরা, স্কারলেট ফিভার, ইয়ালো ফিভার, নিউমোনিয়া, টাইফাস ফিভার, ডিফথেরিয়া, শিশুরোগ, উন্মত্ততা ইত্যাদি এপিডেমিক ও রোগগুলোর বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান, বিভিন্ন হাসপাতালের রিপোর্ট ও তথ্যসূত্রসহ যে প্রমাণ ও বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে- তা দেখলে আশ্চর্য হয়ে ভাবতে হয়, চোখের সামনে মানুষের আরোগ্যকারী এই উপায় থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করছি না?

লিখেছেন :- ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু); চিকিৎসক, শিক্ষক, কলামিস্ট ও প্রাক্তন সাংবাদিক; ডা. আব্দুস সালাম হোমিওপ্যাথি হেলথ কেয়ার, শেরপুর, বগুড়া

তথ্যসূত্র :
  • Book: Organon of Medicine - Dr. Samuel Hahnemann
  • Book: The Lesser Writings - Dr. Samuel Hahnemann
  • Book: Practical Key to Homeopathy - Dr. Nazir Hossain
  • Website: https://hpathy.com
  • Website: http://www.similia.lv/interesanti/par-homeopatiju/lives-saved-by-homeopathy/
বিস্তারিত