কিডনি এবং মূত্রনালীর রোগসমূহ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কিডনি এবং মূত্রনালীর রোগসমূহ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২২

শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম এর কারণ লক্ষণ ও কার্যকর চিকিৎসা

শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম অর্থাৎ বাচ্চাদের জটিল এই কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ এবং এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই পর্বে। Nephrotic Syndrome সমস্যায় কিডনির ছাঁকনি সাময়িক ভাবে শরীরের আমিষ জাতীয় পদার্থ বা অ্যালবুমিন ধরে রাখতে পারে না এবং প্রস্রাবের সঙ্গে তা বের হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তনালিতে অ্যালবুমিনের ঘাটতি দেখা দেয়। নেফ্রোটিক সিনড্রোম সাধারণত দুই থেকে ছয় বছরের শিশুদের হয়ে থাকে। 

শিশুদের নেফ্রোটিক সিনড্রোম ইন চিলড্রেন - কষ্টগুলি

  • এই সমস্যায় শিশুর শরীর ধীরে ধীরে  ফুলে যায়
  • ফোলাটা প্রথমে মুখমণ্ডলের দিকে শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যায়
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়
  • পেটে ব্যথা অনুভূত হয়
  • শিশুর অনেক সময় জ্বর হয়
  • কফ, কাশি হয়
  • শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারণ নেফ্রোটিক সিনড্রমের ফলে ফুসফুসের পর্দায় পানি জমে যায়
শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম

শিশুদের নেফ্রোটিক সিনড্রোম কেন হয়?

শিশুদের নেফ্রোটিক সিনড্রোমে ৯০ শতাংশের কোন কারণ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র। তাই এলোপ্যাথিতে এর চিকিৎসা অনেকটাই জটিল। তবে হোমিওপ্যাথিতে এই সমস্যার একটি কার্যকর ম্যানেজমেন্ট রয়েছে। আর বাকি ১০ ভাগ হলো সেকেন্ডারি নেফ্রোটিক সিনড্রোম। অর্থ্যাৎ কোন না কোন কারণের জন্য এই সমস্যা হয়ে থাকে। যেমনঃ 
  • কোন সংক্রমণ থেকে নেফ্রোটিক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে যেমনঃ ম্যালেরিয়া
  • সিফিলিসের কারণে হতে পারে
  • বাচ্চার যদি লিম্ফোমা, লিউকোমিয়া হয় এসব কারণেও এই সিনড্রোম দেখা দিতে পারে
  • বিভিন্ন প্রকার এলোপ্যাথিক ওষুধের কারণে হতে পারে
  • উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার জন্য নেফ্রোটিক সিনড্রোম হতে পারে
  • পোকা, সাপ বা মৌমাছি কামড় দিলেও নেফ্রোটিক সিনড্রোম হতে পারে
আপনারা জেনেছেন, শিশুদের ৯০ শতাংশ নেফ্রোটিক সিনড্রোম কোন কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে বলে দাবী করে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর প্রপার চিকিৎসা দিয়ে আরোগ্য করতে ব্যর্থ হয় এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা। অথচ শৈশবের জীবনদর্শন, শিশুর মাতাপিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর হিস্ট্রি নিয়ে অনায়াসেই একটি কার্যকর ম্যানেজমেন্ট দিতে পারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র।

শিশুদের নেফ্রোটিক সিনড্রোম চিকিৎসা

অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড দিয়ে মূলতঃ শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম এর চিকিৎসা দিয়ে থাকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা। এলোপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগের ফলে জটিলতা যদি বেশি দেখা দেয়, তখন স্টেরয়েডের সঙ্গে অন্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকে ডাক্তাররা। কারণ স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো বেশি জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে। সর্বোপরি এই সমস্যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাল চিকিৎসা নেই এলোপ্যাথিতে। 
তবে একেবারেই হতাশ হওয়ার আদৌ কোন কারণ নেই। বর্তমান বিশ্বে শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম সমস্যায় কার্যকর চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি। তবে এটা ভাববেন না যে, একজন হোমিও ডাক্তারের কাছে গেলেন, রোগের কথা বললেন, ডাক্তার কিছু ঔষধ দিল সেগুলি আপনার শিশুকে খাওয়ালেন আর অমনি সে ভালো হয়ে গেল !!  বিষয়টি এমন নয়।
এখানে প্রথমেই আপনাকে দক্ষ একজন হোমিও চিকিৎসক খুঁজে বের করতে হবে যিনি শিশুদের এই প্রকারের জটিল সমস্যাগুলি হ্যান্ডেল করতে পারেন। এখানে হোমিওপ্যাথিক নিয়মে একটি প্রপার ইনভেস্টিগেশন জরুরী। শৈশবের জীবনদর্শন, শিশুর মাতাপিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর হিস্ট্রি পর্যালোচনাপূর্বক চিকিৎসক বুঝতে পারবেন কোন True Diseases প্রি-ডোমিনেন্ট থাকার ফলে শিশুটির মধ্যে নেফ্রোটিক সিনড্রোম এর মতো একটি জটিল সমস্যা জেগে উঠেছে। এখানে মূলতঃ সেই সমস্যাটিকে নির্ণয় করে রিসিসিভ করার জন্য যথাযথ চিকিৎসা দিবেন দক্ষ একজন হোমিও চিকিৎসক। তখনই মূলতঃ শিশুর নেফ্রোটিক সিনড্রোম নির্মূলের দিকে আগাবে এবং একসময় চিরতরে দূর হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

যা যা জেনেছেন

  • নেফ্রোটিক সিনড্রোম ইন চিলড্রেন
  • শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণ
  • নেফ্রোটিক সিনড্রোম রোগীর খাবার
  • শিশু কিডনি রোগ
  • কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
  • বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ
  • কিডনি বড় হয়ে যাওয়া
  • কিডনি ছোট হওয়ার কারন
  • শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ঢাকা
বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০২০

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার মানে হলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বেগ পাওয়া এবং প্রস্রাব করা। এটি যেকোন ব্যক্তির প্রতিদিনকার দিন লিপিতে বিঘ্ন ঘটায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে। তাই দ্রুত আরাম পাওয়ার জন্য ঘন ঘন প্রস্রাব হলে শুরুতে অনেকেই না বুঝে এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন যা বহু ক্ষেত্রেই উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের দিনে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে আবার অনেকের রাতে বেশি আসে আবার কারো ক্ষেত্রে দিন রাতে সমান থাকে। দিনে ৪-৫ বার প্রস্রাবের চাপ আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তবে তার থেকে বেশি বার হলে কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

কেউ কেউ আবার মনে করে থাকেন ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া মানেই ডায়াবেটিস, বিষয়টি কিন্তু তাও নয়।  এর পেছনে যেমন ডায়বেটিস থাকতে পারে তেমনি আরো বহু কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লাডার যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করে তাহলেই ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে। আর এরকমটা নানা কারণে হতে পারে যেমন: অ্যালকোহল সেবন, ক্যাফিন, ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন Urinary Tract Infection (UTI), পেলভিক রিজিয়ানে কোন অসুবিধা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রয়া থেকেও হতে পারে।
প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ যারা করেন, ঘামেন, তারা ৫ লিটার পানি খেলে হয়ত ২ লিটার প্রস্রাব হবে যারা বিশ্রামে থাকেন বা ঘামেন না তারা ২.৫ লিটার খেলেই ২ লিটার প্রস্রাব হতে পারে তবে এক সাথে ১ গ্লাসের বেশি পানি পান করার দরকার নেই।
ঘন ঘন প্রস্রাব করার সমস্যা যদি বিশেষ করে রাতের বেলায় হয় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। যখন কিডনির ছাঁকনি গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে দেখা যায়। সুস্থ কিডনি সাধারণত ব্লাড সেল গুলোকে শরীরের ভিতরে রেখে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বের করে দেয়। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন ব্লাড সেল বের হতে শুরু করে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণটির কিডনি রোগের সাথে সাথে টিউমার, কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

  • বেশি বেশি পানি পান করা একটি প্রধান কারণ
  • দুঃশ্চিন্তা, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাকালীন সময়ে বা ইন্টারভিউ দেয়ার পূর্বে 
  • যুবকদের পর্ণ দেখা বা উত্তেজক চিন্তার ফলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • শীতকাল বা ঠান্ডা-শুষ্ক পরিবেশে মানুষের শরীর ঘামে না, ঐ সময় অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে কিডনী শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
  • কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, যেমন - ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির টিউমার, প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি
  • কিডনী অকেজো হবার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর হলে 
  • মূত্র নালীর সংকোচন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে
  • এছাড়া এলকোহল, চা, কফি পান করাও অতিরিক্ত প্রস্রাব হবার জন্য দায়ী
  • ইনফেক্শন একটি কারণ। এটি হলে প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া হবে। প্রস্রাব ছাড়াও জ্বালাপোড়া হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পেলভিক এরিয়াতে বা তলপেটে জ্বালাপোড়া করছে।
  • পুরুষদের প্রোস্টেটে ইনফেকশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
  • প্রস্রাবের পথে যদি কোন বাধা থাকে তাহলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • মেয়েদের গর্ভে সন্তান আসার প্রথম ৩ মাসে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • যক্ষা বা TB হলেও তলপেটে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে 
  • প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এমনকি রক্তও বের হতে পারে 
অনেকেই আবার ঘন ঘন প্রস্রাব হলেই আতংকিত হয়ে পড়েন ডায়াবেটিস হল কিনা এই ভেবে। আপনার আতংকিত হওয়ার মোটেই কোন কারণ নেই। আর ডায়াবেটিস হলেও চিন্তা বা ভয়ের কিছুই নেই কারণ আপনি হয়তো জানেনই না যে - ডায়াবেটিস হলে প্রথমেই আপনি ক্রমাগত এলোপ্যাথিক বা রাসায়নিক ঔষধ দিয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে অভিজ্ঞ কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন। ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসা নিয়েও আপনি সুফল পেতে পারেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার লক্ষন

  • ঘন ঘন প্রস্রাব বেগ হওয়া 
  • প্রস্রাবের প্রচণ্ড চাপ অনুভব
  • প্রস্রাবের সময় ব্যাথা, জ্বালাপোড়া ও অসহ্য অনুভূতি
  • তল পেটে স্বাভাবিকভাবে অথবা চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব
  • ঘন ফেনার মত অথবা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
  • জ্বর-কাঁপুনিসহ অথবা কাঁপুনি ছাড়া
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
  • কোমরের পাশের দিকে অথবা পিছনে মাঝামাঝি অংশে ব্যাথা
  • প্রস্রাবের চাপে রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার প্রতিকার

প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ যারা করেন, ঘামেন, তারা ৫ লিটার পানি খেলে হয়ত ২ লিটার প্রস্রাব হবে যারা বিশ্রামে থাকেন বা ঘামেন না তারা ২.৫ লিটার খেলেই ২ লিটার প্রস্রাব হতে পারে তবে এক সাথে ১ গ্লাসের বেশি পানি পান করার দরকার নেই।

তবে এর ব্যতিক্রম হলেই চিন্তার বিষয়। কি কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা হচ্ছে সেটি বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, প্রোস্টেটে ইনফেকশন, ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর, মূত্র নালীর সংকোচন ইত্যাদি যে কারণই দায়ী থাকুক না কেন সেটি যথাযথ ভাবে নির্ণয় করে প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।
বিস্তারিত

শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

কিডনির পাথর Kidney Stones ! কারণ লক্ষণ প্রতিরোধ চিকিৎসা বা দূর করার উপায়

কিডনির পাথরগুলো অর্থাৎ Kidney stones কেবল কিডনিতে নয়, এর বিভিন্ন অংশে হতে পারে- কিডনিতে হতে পারে, কিডনির ভেতর থেকে বের হওয়া বৃক্ক নালীতে হতে পারে, প্রস্রাবের থলেতে হতে পারে এবং থলে থেকে বের হয়ে অনেক সময় পাথর মূত্রনালিতে আটকা পড়ে। কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণগুলো নির্ভর করে পাথর কিডনির কোথায় এবং কীভাবে রয়েছে। কিডনিতে পাথরের আকার-আকৃতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাথর খুব ছোট হলে সেটি কোনও ব্যথা-বেদনা ছাড়াই দীর্ঘদিন পর্যন্ত শরীরে থাকতে পারে! ফলে টেরও পাওয়া যায় না।

শরীরে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ইউরিক এসিড প্রভৃতির সমন্বয়ে কিডনির পাথর তৈরি হয়। আর এসব উপাদান শরীরে আসে খাবারের মাধ্যমেই। দৈনন্দিন খাবারে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ইউরিক এসিড, সিস্টিনসহ নানা উপাদান থাকে। এগুলো কিডনির মাধ্যমে পুরোপুরি মেটাবোলাইজ বা বিপাক হয় না। কিছু কিছু মানুষের শরীরে এ ধরনের খনিজ পদার্থগুলো কিডনি হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়। এ ছাড়া অনেকের শরীরে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড জমা হয়; আবার অনেক ক্ষেত্রে মেটাবলিক অস্বাভাবিকতার জন্যও সিস্টিন ও অক্সালেট রক্তে জমা থাকে। এই উপাদানগুলো কিডনি দিয়ে রক্ত পরিশোধিত হওয়ার সময় কিডনির নালিতে ক্রিস্টাল তৈরি হয় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল ক্রমান্বয়ে পাথর হয়। যাদের পানি পানের প্রবণতা একটু কম, তাদের এসব পদার্থের যেকোনো একটি দিয়েই ক্রিস্টিলাইজেশন হয়ে পাথর হতে পারে। কিডনির পাথর কয়েক ধরনের হয়।

ক্যালসিয়াম পাথর: বেশির ভাগ কিডনির পাথর ক্যালসিয়াম পাথর। সাধারণত খাদ্যে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম ও  ভিটামিন ডি এবং বিভিন্ন ধরনের বিপাকজনিত শারীরিক সমস্যার কারণে কিডনি দিয়ে বের হওয়ার সময় টিবিউল বা অতিক্ষুদ্র নালিতে ক্যালসিয়াম ঘনীভূত হয়। ক্যালসিয়াম পাথর অনেক সময় ক্যালসিয়াম ফসফেট অথবা ক্যালসিয়াম অক্সালেট আকারে হয়। বয়স্কদের এই পাথর বেশি হয়।

স্ট্রুভাইট পাথর: সাধারণত মূত্রাধারে ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে স্ট্রুভাইট পাথর হয়। এগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বেশ বড় হয়। যাঁরা বারবার প্রস্রাব সংক্রমণের শিকার হন, তাঁদের এটি বেশি হয়।

ইউরিক এসিড পাথর: যাদের রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি থাকে তাদের সাধারণত গাউট বা গেঁটে বাত হয়। ইউরিক এসিড রক্তে বেশি থাকার দরুন এদের কিডনিতে ইউরিক এসিড স্টোন হয়ে থাকে। অল্প বয়সীদের এই পাথর কম হয়।

অক্সালেট ও সিস্টিন পাথর: সাধারণত বংশগত কোনো সমস্যার কারণে এই পাথর হয়। এর ফলে কিডনি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ অক্সালেট অথবা সিস্টিন বের হয়ে যায়। বিশেষ করে অল্প বয়স্কদের হয়। তখন তাকে সিস্টিন স্টোন, অক্সালেট স্টোন বলা হয়।

 কিডনির পাথর - কাদের বেশি হয়

নারীদের তুলনায় পুরুষদের পাথর হওয়ার হার বেশি। ৪০ বছরের পর থেকে পুরুষদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা ৭০ বছর পর্যন্ত বাড়তে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে তা ৫০ বছর বয়স থেকে বাড়তে থাকে। তবে যেকোনো সময় যে কারো কিডনি বা মূত্রনালিতে বা ইউরেটারেও হতে পারে। যাদের একবার পাথর হয়েছে, তাদের বারবার হতে পারে।

কিডনির পাথর - কারণসমূহ

কিডনিতে পাথর জমার বা তৈরি হওয়ার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয় কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ বলে বিবেচিত হয়।
  • কিডনিতে বারবার সংক্রমণ এবং এর ঠিকঠাক চিকিৎসা না করা।
  • দৈনিক অল্প পানি পান
  • খাবারে অধিক লবণ
  • কম ফলফলাদি ও শাকসবজি খাওয়া
  • বেশি লাল মাংস যেমন-গরু ও খাসির মাংস এবং পোলট্রির মাংস খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ
  • বেশি বা খুব কম ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া
  • যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট প্রচুর পরিমাণে খায় এদেরও পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি
  • যেসব লোকের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল রোগ থাকে, তারা কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন
  • টপিরামেট জাতীয় (এটা টোপাম্যাক্স হিসেবে পাওয়া যায়) ওষুধ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো সাধারণত মাইগ্রেনের রোগে ব্যবহার করা হয়
  • অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় শাকসবজি যেমন, পুঁই শাক, পালং শাক, বিট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে

কিডনিতে পাথর - লক্ষণসমূহ

  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। তবে-
  • মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট ছোট পাথর যাওয়া
  • হঠাৎ তলপেটে, নিচের পেটের দুই পাশে বা কোমরে তীব্র ব্যথা
  • রক্তবর্ণের লাল প্রস্রাব, ব্যথা, জ্বালাপোড়া থাকতে পারে
  • ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে
  • ঘোলাটে এবং দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু হয়েই আর না হওয়া।
  • কাঁপুনি দিয়ে জ্বর
তবে আকস্মিকভাবে পেট বা পিঠে ব্যথা অনুভব করা কিংবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা মানেই কিডনিতে পাথরের লক্ষণ নয়, তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন, কারণ হতে পারে এটি মারাত্নক কোন রোগের লক্ষণ। এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই কিডনিতে পাথরের জন্য এমন হচ্ছে কিনা।

কিডনির পাথর - নির্ণয় পদ্ধতি 

  • প্লেইন এক্স-রে। সাধারণত KUB কিডনি ইউরিনারি ব্লাডার অংশটুকু দেখা হয়।
  • কিডনি, ইউরেটার ও ইউরেনারি ব্লাডারের আলট্রাসনোগ্রাম লাগতে পারে।
  • প্রস্রাবের পরীক্ষায়ও পাথর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করলে পাথর হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাবে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষার দরকার হতে পারে।
  • অনেক ক্ষেত্রে আইভিইউ ও সিটি স্ক্যান করার প্রয়োজন হয়।

কিডনির পাথর - চিকিৎসা

কিডনিতে পাথর হলেই অপারেশন করতে হয় এমন ধারণা ঠিক নয়। চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের অবস্থান, আকার, ধরন, কিডনির কার্যকারিতা এবং প্রস্রাবের পথে প্রতিবন্ধকতার ওপর। হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনির পাথর Kidney Stones হলে দূর করা যায় অনেক সহজেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারী করার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

কিডনির পাথর - প্রতিরোধ

  • কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
  • প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ পরিমিত রাখুন।
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে কিন্তু প্রয়োজন ব্যতীত ক্যালসিয়াম ওষুধ ও ভিটামিন ডি যুক্ত ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
  • বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে এর ঠিকমতো চিকিত্‍সা করান।
  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
  • দুধ, পনির বা দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় না খাওয়াই ভাল।
  • ক্যাফেইন এবং সোডা এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত কফি পানে কিডনির অবস্থা আরো খারাপ হবে।
  • কিডনিতে পাথর হওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হলেও অ্যালকোহল কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া অ্যালকোহল কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট করে।
যা যা জেনেছেন
  • কিডনির পাথর দুর করার উপায়
  • কিডনির পাথর অপসারণ
  • কিডনি পাথর গলায় কোন খাবার
  • কিডনি পাথর হোমিও
  • কিডনি পাথরের ঔষধ
  • কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি
  • কিডনির পাথর গলানোর উপায়
  • কিডনির পাথর ধ্বংস করার উপায়
বিস্তারিত

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯

সিস্টাইটিস Cystitis মূত্রাশয় বা মূত্রথলির প্রদাহ ! কারণ উপসর্গ প্রতিকার

সিস্টাইটিস Cystitis হলো মূত্রাশয় বা মূত্রথলির প্রদাহ। নারী পুরুষ যেকেউ এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং সব বয়সের পুরুষই আক্রান্ত হতে পারে। কারণ ভেদে এটি বিভিন্ন টাইপের হয়ে থাকে -
  • ব্যাকটেরিয়া জনিত সিস্টাইটিস: এটি একটি কমন টাইপ। দেখা গেছে পায়ুপথথেকে ব্যাকটেরিয়া এসে মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।
  • ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস: এটি সাধারণত আঘাতের কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সংক্রমণের উপস্থিতি খুব কম থাকে।
  • রেডিয়েশন সিস্টাইটিস: যেসকল রোগীরা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন নিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে সচরাচর এটি হতে দেখা যায়। 
  • হেমোরেজিক সিস্টাইটিস: এই ধরণের সিস্টাইটিসের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে থাকে। 
  • কেমিক্যাল সিস্টাইটিস: বিভিন্ন কেমিক্যাল দ্রব্যাদি থেকে যে ধরনের সিস্টাইটিস হয় তাকেই কেমিক্যাল সিস্টাইটিস বলা হয়। 
  • ড্রাগ ইন্ডিউসড সিস্টাইটিস: এলোপ্যাথিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মূলত এই প্রকার সিস্টাইটিস হয়ে থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন টাইপের সিস্টাইটিস দেখা যায় -
  • Diabetes Mellitus (DM)
  • Kidney Stones
  • Enlarged Prostate
  • Spinal Cord Injury

সিস্টাইটিস - সাধারণ কারণগুলি 

  • মূত্রথলিতে বি-কোলাই, টাইফয়েড, গনোরিয়া ইনফেকশন
  • স্ট্রেপটোকক্কাস , স্টাফাইলোকক্কাস ইনফেকশন
  • হিম-ঠান্ডা পানিতে ভিজা
  • মূত্রথলিতে পাথরী হওয়া
  • মূত্র থলিতে অত্যধিক চাপ বা আঘাত লাগা
  • যে কোন যৌন ব্যাধির আক্রমণ

সিস্টাইটিস - লক্ষণ ও উপসর্গ 

  • তলপেটের সামনের দিকে ব্যাথা
  • তলপেটে চাপ অনুভব করা
  • সর্বদাই মূত্রবেগ কিন্তু মূত্র নিঃসরণে অতিব কষ্ট হয়
  • প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা কষ্ট হওয়া
  • চলাফেরা ও নড়াচড়া করলে বেদনার বৃদ্ধি হয়
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা বা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছে জাগা
  • রাতের বেলা প্রস্রাবের ইচ্ছে জাগা
  • প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া
  • প্রস্রাব লাল বর্ণ, শ্লেষ্মা ও রক্ত মিশ্রিত
  • প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
  • প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া
  • জ্বর হতে পারে
  • গা বমি বমি, শীতল ঘাম, হিক্কা ও দূর্বলতা প্রকাশ পায়
  • মূত্র থলিটি ভারী বোধ হয়
  • মূত্র থলিতে খুব জ্বালা পোড়া হয়

সিস্টাইটিস - চিকিৎসা

এই সমস্যার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। তবে এর জন্য অবশ্যই একজন এক্সপার্ট হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরী। 
বিস্তারিত

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

ঘন ঘন প্রস্রাব এবং জ্বালাপোড়া ! কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI)

কিডনি ও মূত্রনালির সংক্রমণ Urinary Tract Infection (UTI).মানুষের শরীরের দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। আর এই তন্ত্রের যে কোন অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। এই সংক্রমণকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব এবং এর সাথে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এই সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। সাধারণত এই সমস্যাটি মহিলা ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে হলেও মহিলাদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হল UTI; প্রায় ৫০% মহিলাদের জীবনে একবার এই সংক্রমণ হয় এবং যে মহিলাদের একবার এই সংক্রমণ হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৮০% মহিলাদের পরে আবার UTI হতে দেখা যায়। UTI এর ফলে কিডনি, ব্ল্যাডার বা মূত্রথলী এবং জরায়ুতে প্রভাব পড়তে পারে, যার মধ্যে ব্ল্যাডারের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায় এবং এটি তত গুরুতর নয়।

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - প্রকারভেদ

কোথায় হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে একে আবার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়ে থাকে -
  • ব্লাডার বা মূত্রথলিতে হলে একে বলে সিস্টাইটিস
  • ইউরেথ্রা বা মূত্রনালিতে হলে একে বলে ইউরেথ্রাইটিস
  • কিডনিতে হলে একে বলে পাইলোনেফ্রাইটিস
কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা, কিন্তু ঠিক মতো প্রস্রাব হয় না 
  • প্রস্রাব আটকে রাখতে অসুবিধা হতে পারে
  • প্রস্রাব করার সময় তীব্র ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে
  • শরীর দূর্বল অনুভত হতে পারে 
  • তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে
  • ঘোলা ও দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব বা কখনো কখনো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে
  • প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে বর্ণের হতে পারে
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালা বা ব্যথা হতে পারে
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ভাবের সাথে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে
  • ছোটদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া, জ্বর, খেতে না চাওয়া ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা যায়

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - কারণ

বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসমূহ বা বিরল ক্ষেত্রে ছত্রাক এর কারণ হয়ে থাকতে পারে। যেমন-
  • E. coli (Escherichia coli)
  • Proteus
  • Klebsiella
  • Pseudomonas
  • Enterobacter
  • Staphylococcus
  • Streptococcus

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - অন্যান্য কারণ

  • যদি কারো কিডনি অথবা মুত্রথলিতে পাথর থাকে তবে তা স্বাভাবিক মূত্রত্যাগে বাধা প্রদান করে। এর ফলেও ইনফেকশন হতে পারে।
  • অনেকক্ষণ যাবত প্রস্রাব আটকিয়ে রাখলে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। টেলিভিশন দেখার সময়, বাসে ট্রেনে যাতায়াত করার সময় বা জরুরী মিটিং-এর সময় অনেকেই প্রস্রাব আটকিয়ে রাখেন যা একদমই উচিত নয়।
  • যৌনসঙ্গীর ইউটিআই থাকলে শারীরিক মিলনের সময় অন্য সঙ্গীও সংক্রমিত হতে পারেন।
  • নিজস্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে ইউটিআই হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস, প্রেগন্যান্সি বা অন্য কোন রোগে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে থাকে তাহলে ইউটিআই হতে পারে।
  • অনেক সময় অপারেশনের আগে বা পরে রোগীদের ক্যাথেটার পড়ানো হয়। যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করতে পারেন না ক্যাথেটার দিয়ে পাইপের সাহায্যে তাঁদের মূত্র বের করা হয়। বেশিদিন ক্যাথেটার পরানো থাকলে খুব সহজেই তার ইউটিআই হতে পারে।
  • মহিলাদের মেনোপজ-এর পর ইস্ট্রোজেন-এর ক্ষরণ কমে যায়। ইস্ট্রোজেন মূত্রনালির সংক্রমণে বাধা দেয়। মেনোপজ-এর পর সেই সম্ভাবনা একদম থাকে না। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

Urinary Tract Infection (UTI) - Investigation

  • Blood Test for CBC
  • USG for KUB
  • Urine for C/S

কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ - প্রতিরোধ

  • সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন নিয়মিত ও পরিমিত পানি পান করা। 
  • সকালে ঘুম হতে উঠে খালি পেটে পানি পানের অভ্যাস গড়ে তোলা। 
  • প্রস্রাব আটকে না রাখা। 
  • যখনই বেগ আসে তখনই প্রস্রাব করা। 
  • কোষ্ঠ্যকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 
  • মূত্রত্যাগের পর যথেষ্ট পানি ব্যবহার করতে হবে। 
  • শারীরিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 
  • ডায়াবেটিস হলে প্রপার হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা। 
  • সহবাসের পূর্বে প্রস্রাব করা। এতে মূত্রনালিতে আসা সব জীবাণু পরিস্কার হয়। 
  • স্যানিটারী প্যাড ঘন ঘন বদলিয়ে নেওয়া।
  • মুসলমানি করানো হলে সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 
  • খুব আটসাট অন্তর্বাস না পরা। সুতী অন্তর্বাস পরিধান করা উত্তম।

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - চিকিৎসা 

হোমিওপ্যাথিতে কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারী ট্রাক্ট ইনফেকশন (UTI) উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। পেসেন্টের বিস্তারিত উপসর্গ পর্যালোচনা করে একটি প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট দিলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে। তবে এর জন্য এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরি।  
বিস্তারিত