রোগ-ব্যাধি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রোগ-ব্যাধি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০

ভেরিকোস ভেইন শিরা স্ফীতি কারণ লক্ষণ কার্যকর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ভেরিকোস ভেইন কি, কেন হয়, এর কারণ লক্ষণ এবং হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা জানবো। এটি আমাদের শিরা বা রক্তনালীর একটি রোগ। শরীরের কোন অংশের শিরা যদি প্রসারিত হয়ে যায় অর্থাৎ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বড় হয়ে যায় তাকে ভেরিকোস ভেইন (Varicose Vein) বলা হয়। শিরা হচ্ছে সে সকল রক্তনালী যেগুলি সারা শরীর থেকে দূষিত রক্তকে পরিশোধিত করার জন্য হৃদপিণ্ডে নিয়ে যায়। যখন এই কাজে বাঁধার সৃষ্টি হয় তখন রক্ত স্থির হয়ে থাকে এবং রক্তনালী ফুলে ওঠে। এই স্ফীত শিরাগুলোকেই ভেরিকোস ভেইন বলে। এই সমস্যা শরীরের যেকোন স্থানেই হতে পারে, তবে পা ও উরুতে বেশি দেখা যায়। এছাড়া পুরুষের স্ক্রোটামের ভেতর বা অন্ডথলির মধ্যেও বেশি হতে দেখা যায় যাকে ভেরিকোসিল বলা হয়ে থাকে, এ সম্পর্কে আপনারা ইতিপূর্বে জেনেছেন। আমরা মূলত এই পর্বে ভেরিকোস ভেইন বা শিরা স্ফীতি সম্পর্কেই আলোকপাত করবো।

পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটুর মাঝখানের অংশে (সেফানাস ভেইন) ভেরিকোস ভেইন বেশি হতে দেখা যায়, এ রোগ হলে শিরা বরাবর রোগী ব্যথা অনুভব করেন। চামড়ার ঠিক নিচে মোটা মোটা ভেইনগুলো দেখতেও বেশ কদাকার মনে হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করালে পায়ে আলসার বা ঘা হয়ে যেতে পারে, পায়ের স্নায়ু নষ্ট হয়ে গ্যাঙ্গরিন হতে পারে। অল্প আঘাতেই এসব শিরা থেকে রক্তপাত শুরু হবার সম্ভাবনাও খুব বেশি। প্রতিরক্ষা বাহিনী বা পুলিশ হিসেবে চাকরি করতে চাইলে ভেরিকোস ভেইন একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ভেরিকোস ভেইন শিরা স্ফীতি কারণ লক্ষণ এবং কার্যকর চিকিৎসা

ভেরিকোস ভেইন শিরা স্ফীতি - কারণ

  • বংশে থাকলে এই অসুখের প্রবণতা বাড়ে
  • সাধারণত ভেইন বা শিরার ভাল্ব নষ্ট হয়ে যাবার কারণে এই রোগটি হয়
  • শিরায় ইনফেকশন হলে
  • গর্ভাবস্থায়, পেটে টিউমার হলে বা পানি জমলে
  • পেশাগত কারণে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করার কারণেও এ রোগটি হতে দেখা যায়।

ভ্যারিকোস ভেইন - লক্ষণসমূহ

  • পায়ের রক্তনালী ফুলে আঁকাবাঁকা হয়ে যায়।
  • ভেরিকোস ভেইন বা শিরা স্ফীতি হলে শুরুতে খুব একটা ব্যথা বেদনা থাকে না। 
  • শুরুতে পা ভারী ভারী মনে হয়।
  • পায়ের শিরা ঘন নীল বর্ণ ধারণ করে।
  • পায়ের শিরা পাকানো দড়ির মতো হয়ে যায়, যা বাইরে থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
  • পায়ের পাতা ফুলতে শুরু করে, জ্বালা ভাব থাকে।
  • পায়ের মাংসেপশীতে টান ধরা বা খিঁচুনি হতে পারে।
  • যে অংশে শিরা ফুলে ওঠে সেখানে চুলকানি হতে পারে।
  • পায়ের ত্বকের রঙ বদলে যায়, ত্বক শুকিয়ে পাতলা হয়ে যায়, ত্বক থেকে আঁশ ওঠে এবং ফুলে যায়।
  • যত দিন যায় সমস্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। টানা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে পায়ে ব্যথা শুরু হয়।
  • পায়ের ফুলে ওঠা শিরার ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
  • চিকিৎসার অভাবে সমস্যা বাড়তেই থাকে, পায়ে আলসার বা ঘা হয়ে যায়। 
  • আচমকা ব্লিডিং শুরু হতে পারে।

ভেরিকোস ভেইন শিরা স্ফীতি - চিকিৎসা 

ভেরিকোস ভেইন বা শিরা স্ফীতি সমস্যার কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। কারণ একমাত্র হোমিওপ্যাথিতেই এই সমস্যার জন্য অনেক কার্যকর ঔষধ রয়েছে। তবে সেগুলি প্রয়োগ করলেই সমস্যা সেরে যাবে না। এর জন্য দরকার প্রোপার কেইস টেকিং এবং প্রোপার মেডিসিন এপ্লিকেশন যা করতে পারেন অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসক। এখানে আপনার নিজের যাবতীয় তথ্যের সাথে আপনার পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এবং নানা-নানীর হিস্ট্রি নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে একটি উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে। তাই এই সমস্যা নির্মূলে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

ভেরিকোস ভেইন শিরা স্ফীতি - বিধি নিষেধ

খাবার দাবারে বিধি নিষেধ
  • মাংস, চর্বিজাতীয় ও উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার বর্জন করুন
  • যাবতীয় প্রাণীজ খাবার পরিহার করুন 
  • তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, জাংফুড বর্জন করুন
  • লবন, মিষ্টি, চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করুন
  • চা, কফি এবং গরুর দুধ বর্জন করুন
  • শাকসবজি, ফল এবং ফলের জুস থেকে পারেন
জীবন যাপনে বিধি নিষেধ
  • কর্মস্থলে টানা দাঁড়িয়ে থাকবেন না, মাঝে মাঝে বসুন
  • টানা বসেও থাকবেন না মাঝে মাঝে হাঁটাচলা করুন
  • আঁটসাঁট পোশাক পরিহার করুন, ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করুন
  • তীব্র গরম পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
  • অধিক ভারী জিনিস উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকুন
  • হালকা ব্যায়াম এবং সকাল বিকাল হাঁটা চলা করা
  • ব্যথা তীব্র হলে বিছানায় শুয়ে পা দুটি কিছুক্ষন উপর দিকে দিয়ে রাখুন
বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

নখ কুনি ও নখের ফাঙ্গাস! নখ মোটা পুরু বা ফেটে যাওয়া রোগের কার্যকর চিকিৎসা

নখের ফাঙ্গাস হল অতি সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া একটি ছত্রাকের সংক্রমণ যা হাতের নখে বা পায়ের নখে হয়। এটি নখের ডগা বা প্রান্তভাগ থেকে শুরু করে নখের মধ্যবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নখের রঙকে ফ্যাকাশে অথবা পরিবর্তিত করে। যদিও নখে ছত্রাক সংক্রমণ কোন গুরুতর বা জটিল পরিস্থিতি নয়, তবে এটি নিরাময় হতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে।

আবার কারো কারো নখ কুনির সমস্যাও দেখা দেয়। এর সাধারণ অবস্থা হল পায়ের বড় আঙুলর নখ পাশ নরম মাংসের মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়া। ফলে কখনও কখনও ব্যথা, লালচেভাব, ফোলা, সংক্রমণ হয়

নখের ফাঙ্গাস -  লক্ষণ ও উপসর্গগুলি 

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি নখে ছত্রাকের সংক্রমণ নীচে দেওয়া উপসর্গগুলির মধ্যে যেকোন একটির কারণে হতে পারে:
  • নখের চারপাশে ব্যথা
  • নখের চারপাশের অংশ ফোলা
  • নখের আকারের পরিবর্তন
  • নখ শক্ত হয়ে যাওয়া
  • নখের রঙের ফ্যাকাশেভাব বা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
  • ভাঙ্গা নখ
  • নখের ভিতর ময়লা জমে থাকা
  • নখের প্রান্ত ভাগ ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়া
  • নখের চকচকে ও উজ্জ্বলভাব কমে যাওয়া

নখের ফাঙ্গাস - প্রধান কারণগুলি

সাধারণত হাতের নখের সংক্রমণের চেয়ে পায়ের নখের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। নীচে দেওয়া পরিস্থিতিগুলি নখে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:
  • নখে অথবা ত্বকে সামান্য আঘাত লাগা।
  • দুর্বল অনাক্রম্যতা
  • নখের বিকৃতি
  • নখের রোগ
  • চাপা জুতো পরিধানের ফলে নখে হাওয়া চলাচল বাধা পায়
  • বহুসময় ধরে ত্বক আর্দ্র বা ভিজে অবস্থায় থাকা

নখের ফাঙ্গাস - রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

  • নখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  • নখটিকে চাঁচা হয়, এবং টিস্যুটিকে একটি মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি নখে কি ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছে তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা: নখ মোটা পুরু বা ফেটে যাওয়া রোগের কার্যকর চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি। এর জন্য এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।

নখের ফাঙ্গাস - পরামর্শ 

নখের সংক্রমণ প্রতিহত করার উপায়:
  • সর্বদা আপনার নখ ও তার পার্শ্ববর্তী ত্বককে পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন
  • আপনার শরীর বা অন্য কারোর উপর অন্যান্য কোন ছত্রাক সংক্রমণের সংস্পর্শ হলে স্থানটিকে যথাযথভাবে ধুয়ে ফেলুন
  • অন্য ব্যক্তির হাত ও পা পরিষ্কারের সরঞ্জাম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
  • আপনার নখ ও ত্বকের সবচেয়ে ভালো পরিচর্যা করুন
নখের ফাঙ্গাস ঔষধ, হাতের নখের ফাঙ্গাস দূর করার উপায়, নখের ইনফেকশন, নখ মরে যাওয়া, ফাঙ্গাস এর চিকিৎসা, পায়ের নখের সমস্যা সমাধান, পায়ের নখ মরে যাচ্ছে এই সকল সমস্যার উন্নত চিকিৎসা মূলত হোমিওপ্যাথি। 
বিস্তারিত

সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯

মাথাব্যথা (Headache) ! মাইগ্রেন টেনশন ক্লাস্টার কারণ লক্ষণ এবং চিকিৎসা

মাথাব্যথা (Headache) খুবই সাধারণত একটি সমস্যা। প্রত্যেক মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মাথাব্যথার অনেক রকমভেদ আছে যেমন মাইগ্রেন, টেনশন-টাইপ মাথাব্যথা, ক্লাস্টার মাথাব্যথা ইত্যাদি। ঘনঘন মাথাব্যথা প্রাত্যহিক পারিবারিক ও কর্মজীবনকে বিষাদময় করে তুলতে পারে। এছাড়া তীব্র মাথাব্যথা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।

টেনশন হেডেক 

এই ব্যথা মাথার দুদিকেই হয়, চাপ চাপ ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং মনে হতে পারে যে মাথার চারদিকে একটি ব্যান্ড আটকে আছে। সকালের দিকে মাথাব্যথা কম থাকে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। ব্যথা ৩০ মিনিট থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। টেনশন হেডেকে বমি বা আলো ভীতি থাকে না।
টেনশন হেডেকের কারণ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি জানা যায়নি। কিন্তু্তু বলা হয় যে, মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশির অস্বাভাবিক সংকোচনের ফলে এই ব্যথা হয়। মানসিক চাপ ও অবসাদ রয়েছে টেনশন হেডেকের মূলে। বেশির ভাগ মাথা ব্যাথাই হয় টেনশন বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। টেনশন হলেই শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, সেখান থেকে 'অ্যাড্রিনালিন' নামে বিশেষ এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরিত হয়। ফলে দেহকোষ থেকে হিস্টামিন, সেরাটোনিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসৃত হয়। এতে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে মাথা ব্যথা শুরু হয়। মাথা ব্যথা ছাড়া অতিরিক্ত টেনশন থেকে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিও হতে পারে।

মাইগ্রেন হেডেক 

মাথা ব্যথার মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথা অধিকতর তীব্র। ব্রেনের ভেতরে রক্তবাহী নালিগুলো কোনো কারণে সংকুচিত হলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণেই এ ধরনের মাথা ব্যথা হয়। এ জন্য শরীরের পরিপাকপ্রক্রিয়া, মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালনে সমস্যা, এমনকি জেনেটিক্যালিও নানা সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা মাথার এক পাশ দিয়ে শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। এই ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এই প্রকার মাথাব্যথায় মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হন। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মধ্য বয়স পর্যন্ত মহিলাদের হার সবচেয়ে বেশি। তীব্র দপদাপ করে মাথাব্যথা। সাধারণত মাথার একদিকে, সেই সাথে বমি বা বমির ভাব এবং আলো ভীতি-এই হচ্ছে মাইগ্রেনের লক্ষণ। তাছাড়া চোখের সামনে রঙিন আলোকছটা দেখা, দৃষ্টি শক্তির সমস্যা, কথা বলতে বা খেতে অসুবিধা, শরীরে একপাশে দুর্বলতা বা অনুভূতিহীন ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।

ক্লাস্টার হেডেক 

এই প্রকার মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন মাথাব্যথার অন্তর্ভুক্ত বলা হয় অনেক সময়। ক্লাস্টার হেডেক বা গুচ্ছ মাথাব্যথায় সাধারণত ধমপায়ী পুরুষেরা আক্রান্ত হন। প্রতিদিন একই সময় বিশেষ করে সকালের দিকে ৩০ থেকে ৯০ মিনিট তীব্র মাথাব্যথা হয়। এভাবে কয়েকদিন, সপ্তাহ বা মাস এই ব্যথা হয় এবং তারপরে কয়েক মাস আবার কোনো ব্যথা থাকে না। ক্লাস্টার হেডেকের সাথে এক চোখ ব্যথা, কনজাংটিভার ইনফেকশন, এক চোখ দিয়ে পানি ঝরা এবং নাক বন্ধ হয়ে যায়
ক্লাস্টার মাথা ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়, তবে আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বাড়ে। ব্যথা এক পাশে শুরু হয়ে অনেক সময় চোখের পেছনের দিকেও প্রবাহিত হয়ে তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় নাক, চোখ বা ব্যথার স্থান লাল বর্ণও ধারণ করতে পারে। তীব্র আলো, ঘ্রাণ বা গন্ধ এবং শব্দে এ ধরনের মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।

মাথাব্যথা চিকিৎসা

মাথাব্যথা সেটা যে ধরণের উপসর্গ নিয়েই আসুক না কেন এর উন্নত এবং স্থায়ী চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। তবে এর জন্য এক্সপার্ট একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরি। 
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৯

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার, Dengue Fever কার্যকর চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরে ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয় অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার থেকে বেশি হবে। ডেঙ্গু জ্বরের Dengue Fever যে উপসর্গ বা লক্ষণগুলি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা,পেশি এবং গাঁটে ব্যথা এবং ত্বকে হামজ্বরের মতো র‍্যাশ। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোর‍্যাজিক ফিভার-এ পর্যবসিত হয় ,যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম-এ পর্যবসিত হয়, যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম থাকে।

এই Dengue Fever বা ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার জন্য কার্যকর ঔষধ রয়েছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরি যিনি আপনার যাবতীয় লক্ষণ সমষ্টি পর্যালোচনা করে ঔষধ প্রয়োগ করবেন। নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ করা থাকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ

একজন ডেঙ্গু জ্বরে ব্যক্তির সাধারণত উচ্চ জ্বর হয় অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার থেকে বেশি হবে। সাথে নিম্নের লক্ষণগুলোর অন্তত দুটি প্রকাশ পাবে
  • তীব্র মাথা ব্যথা
  • চোখের পিছনের দিকে তীব্র ব্যথা
  • জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
  • মাংসপেশী অথবা হাড়ে ব্যথা (এজন্য অন্য নাম: হাড় ভাঙ্গা জ্বর)
  • হামের মত র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়
  • নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে
  • রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ করে যাবে
লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট বাচ্চা ও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক, শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়

ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা

ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা তা বুঝতে যে পরীক্ষা করা হয় তা হলো সিবিসি টেস্ট (CBC Test) । এটা হলো রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করতে করা। প্লাটিলেট ( platelets) সাধারণত দেড় লক্ষের নীচে হলে সন্দেহ করা হয় ডেঙ্গুর দিকে যাচ্ছে। আরডেঙ্গু এনএস১এজি (Dengue NS1AG) এই অ্যান্টিজেন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ডেঙ্গু হয়েছে কিনা।

যখন পরীক্ষা করবেন 

জ্বর হওয়ার ৪/৫ দিন পর করবেন কারণ এর পূর্বে করলে রিপোর্ট নরমাল আসতে পারে।

কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে তেমন নয়। প্লাটিলেট কাউন্ট যখন ৩০ হাজারের নিচে নামে তখন আপনি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। এছাড়াও যদি অনেক বমি শুরু হয় আর দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত যায়, কালো পায়খানা হয় এবং রোগী অনেক দূর্বল হয়ে যায়, তখন প্রেশার কমে গেলে দেরী না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ

এ রোগের কোন টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়। এজন্য -
  • জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন।
  • দিন ও রাতে আলোতেও এরা কামড়ায়। তাই দিনের বেলাতেও মশারী ব্যবহার করুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নেই কারণ এটি হলো ভাইরাস জ্বর। তবে এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। এই রোগের লক্ষণগুলোর উপর চিকিৎসা দেয়া হয়। এর সাথে যা যা করবেন...
  • রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখুন
  • প্রচুর পানি পান করতে দিন
  • ডাবের পানি খেতে দিতে পারেন
  • কমলা খেতে দিতে পারেন রোগীকে 
  • ১ গ্লাস বিশুদ্ধ পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে দিনে কয়েক বার খেতে দিতে পারেন
  • সহজে হজম হয় এমন খাবার এবং শাকসব্জি খেতে দিন
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিন
  • রোগীকে অ্যাসপিরিন বা এজাতীয় ঔষধ দিবেন না তাতে রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে 
  • ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ের কিছু নেই। অভিজ্ঞ কোন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়।
বিস্তারিত

শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯

BMI কি? বি এম আই BMI নির্ণয় পদ্ধতি ! অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি কমানোর সহজ উপায়

বি এম আই - বডি মাস ইনডেক্স Body Mass Index (BMI) হলো আপনার দেহের ওজন এবং দৈর্ঘ্য বা উচ্চতার বর্গের অনুপাত। উদারহণ হিসেবে নিম্নে খোকনের বিএমআই নির্ণয় করে দেখানো হয়েছে। BMI হলো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওজন ও উচ্চতার ভিত্তিতে স্থুলতা নির্ণয়ের একটি নির্ভরযোগ্য ও সর্বাধিক প্রচলিত সূচক বা পন্থা, যা ব্যক্তির ওজনাধিক্যের ধরণ নির্দেশ করে নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি হতে রক্ষা করে। বিএমআই মানের মাধ্যমে জানা যায় যে দেহের ওজন স্বাভাবিক, কম বা বেশী ইত্যাদির মধ্যে কোন পর্যায়ে আছে।  বি এম আই সূত্র হলো -
BMI = দেহের ওজন (কেজি) / দেহের উচ্চতা (মিটার)২
একেক দেশের লোকসংখ্যা ও খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী BMI এর স্ট্যান্ডার্ড ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে মানব দেহে সুস্থতার জন্য BMI এর আদর্শ মান হলো ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে।
বিএমআইশ্রেনী
১৮.৫ওজনহীনতা
১৮.৫ – ২৪.৯স্বাভাবিক ওজন 
২৫ – ২৯.৯অতিরিক্ত ওজন 
৩০ – ৩৪.৯ স্থুলতা

উদাহরণঃ খোকনের ওজন ৬৮ কেজি এবং উচ্চতা ১৭০ সে.মি. খোকনের বি এম আই নির্ণয় কর।

খোকন একজন দক্ষ ও অত্যন্ত পরিশ্রমী ফুটবল খেলোয়াড়। তার ওজন ৬৮ কেজি এবং উচ্চতা ১৭০ সেন্টিমিটার। সে রুটি, আলু, বাদাম, ডিমের কুসুম খেতে পছন্দ করে। শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ, মাংস খেতে পছন্দ করেনা। 
খোকনের বি এম আই নির্ণয় কর
খোকনের বি এম আই নির্ণয় করে দেখা যাচ্ছে তার বিএমআই এর মান বা ফলাফল ১৮.৫ – ২৪.৯ এর মধ্যে রয়েছে। এর মানে হলো খোকন স্বাভাবিক ওজনের অধিকারী অর্থাৎ সে ওজনহীনতা, অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতায় ভুগছে না। 
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার সাথে ওজনাধিক্যের রয়েছে  নিবিড় সম্পর্ক। যাদের ওজন বেশি, অর্থাৎ, যারা ওজনাধিক্য কিংবা স্থুলতায় ভুগছেন তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, অষ্টিওপোরেসিস সহ নানা অসুখ হবার আশঙ্কা থাকে, যা মহিলাদের ক্ষেত্রে আরও প্রকট আকার ধারণ করে। পক্ষান্তরে, কারও ওজন যদি খুব কম থাকে, তবে সে সবসময় দুর্বল ও ক্লান্তবোধ করে, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

এ সকল বিষয়ের প্রেক্ষিতে প্রতিটি মানুষের সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন লাভের জন্য একটি কাম্য ওজন বা Standard weight বিবেচনা করা হয়। ব্যক্তি বিশেষের এই কাম্য ওজন পরিমাপের একটি পদ্ধতি হলো Body Mass Index Or BMI নিরূপণ।
মদ্যপান, অতিরিক্ত ঘুম, মানসিক চাপ, স্টেরয়েড এবং অন্য নানা ধরনের ওষুধ গ্রহণের ফলেও ওজন বাড়তে পারে। বাড়তি ওজন কিংবা ভুঁড়ি নিয়ে অনেক সমস্যা। বাড়তি ওজনের জন্য যেকোনো ধরনের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া রক্তনালিতে চর্বি জমে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাড়তি ওজন রক্তচাপেরও কারণ। ডায়াবেটিস টাইপ-২ দেখা দিতে পারে মেদ বৃদ্ধির জন্য। মেদবহুল ব্যক্তির জরায়ু, প্রস্টেট ও কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা শতকরা ৫ ভাগ বেশি।

ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। হাঁটুর সন্ধিস্থল, কার্টিলেজ, লিগামেন্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আর্থ্রাইটিস, গেঁটে বাত এবং গাউট হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চর্বি থেকে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, অতিরিক্ত কম ওজন বা অতিরিক্ত বেশি ওজন বা স্থূলত >> দুটোই সুস্থতার বিপরীত। নিজের আদর্শ ওজন নির্ণয় করুন, এবং আপনার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওজনকে আদর্শ অবস্থানে আনবার জন্য চেষ্টা করুন। কেবল সুন্দর থাকা মানেই ভালো থাকা নয়, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাই সত্যিকারের ভালো থাকা।

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি কমানোর সহজ উপায়

সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন কোন প্রাণীজ খাবার অর্থাৎ এনিম্যাল ফুড খাবেন না এবং সে অনুযায়ী চলতে থাকুন তাহলেই আপনার ওজন অর্ধেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কোন প্রকার পার্শপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা বা মেদ ভূঁড়ি কমানোর জন্য এর সাথে আপনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও নিতে পারেন। এই অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা বা মেদ ভূঁড়ি সমস্যার পেছনে হরমোনাল কারণসহ বিভিন্ন ধরণের কারণ থাকে যা প্রপার হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। 
বিস্তারিত

বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি অতিস্থূলতা Obesity কমানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি অতিস্থূলতা Obesity আজকাল আমাদের দেশে একটি কমন বিষয়। শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে এই সমস্যার তৈরী করে থাকে। অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা বৃদ্ধি পেলে আমাদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রকার রোগের সম্ভাবনা দেখা দেয়, বিশেষত হৃদরোগ, দ্বিতীয় পর্যায়ের ডায়াবেটিস, শুয়ে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট, কয়েক ধরনের ক্যান্সার এবং অস্টিওআর্থারাইটিস। অনেকে খুব কম পরিমাণে খাচ্ছেন অথচ ক্রমশ ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর জন্য ধীর বিপাক ক্রিয়া বা ধীরে হজম হওয়াকেই দায়ী করা যেতে পারে।

আপনি সব সময় শুনে এসেছেন যে অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং আরও অনেক অসুখ ঘটাতে পারে। কিন্তু আপনি কি জানেন অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়? ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষকরা সন্দেহ করে আসছেন যে শারীরিক ওজনের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পকর্ রয়েছে। বতর্মানে তারা প্রমাণ পেয়েছেন কীভাবে শারীরিক ওজন ক্যান্সার ঘটায়। শরীরের অতিরিক্ত চবির্ শুধু সেখানে বসে থাকে না, সেটা তন্ত্রে সক্রিয় পরিবতর্ন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়াকে সহজ করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, চবির্ কোষগুলো বুকে হরমোহনসহ শারীরিক বৃদ্ধি ঘটানো বস্তুগুলোর নিঃসরণ ঘটাতে দ্রত কাজ করে। এসব বস্তু শরীরের বিভিন্ন কোষে সঙ্কেত পাঠিয়ে দ্রত কোষের বিভাজন ঘটায়। এভাবে যত্রতত্র কোষ বিভাজন বেড়ে যায় এবং তা ক্যান্সারের সৃষ্টি করে।

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি অতিস্থূলতা Obesity- কারণ

  • কারও কারও জেনেটিক বা বংশগত কারণেই মোটা হওয়ার ধাত তৈরি হয়।
  • অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ মোটা হওয়া বা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। মনে রাখতে হবে, অতিভোজনই অতি ওজন। খাবারের মধ্যে যা শক্তি সঞ্চয় হয়, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্ষয় না হলে, ওজন বাড়তেই থাকবে।
  • পরিশ্রমবিহীন অলস জীবন মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ।
  • অ্যালকোহল, এনার্জি ও হেলথ ড্রিংকস, কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • অ্যান্ড্রোক্রাইন ও হরমোনজনিত রোগ, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, কুশিং সিনড্রোম ইত্যাদি।
  • দীর্ঘদিন যাবৎ কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে। যেমন স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ।

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি অতিস্থূলতা Obesity কমাতে যা যা করবেন

  • প্রথমেই আপনাকে  বি এম আই BMI সূত্র>> প্রয়োগ করে আপনার দেহের দৈর্ঘ্য বা উচ্চতার অনুপাতে আপনার শরীরের ওজন ঠিক আছে কিনা সেটা নির্ণয় করতে হবে। 
  •  দ্রুত বা তাড়াহুড়ো করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। নিয়মমাফিক ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। শারীরিক কোনো রোগ শনাক্ত করা গেলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া ওজন কমানোর অন্যান্য পদ্ধতিগুলো আপনার নিজের হাতের মুঠোতেই। পেটটা অতিরিক্ত খেয়ে ভর্তি না করাই ভালো। বরং পেটের কিছুটা অংশটা খালি রাখা ভালো।
  •  খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
  • এনিম্যাল ফুড অর্থাৎ প্রাণীজ খাবার বর্জন করুন
  • ওজন সীমিত রাখতে পরিমিত খাবার খেতে হবে
  • কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • ফাস্ট ফুড-জাতীয় খাদ্য এবং বাইরের খাবার না খাওয়া
  • ভাত কম খাওয়াই উচিত। খাওয়ার আগে শসা, টমেটো, পেয়ারা খেয়ে নিলেও বেশি ভাত খেতে ইচ্ছে করবে না
  • খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেন থাকে
  • চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা। যেকোনো উৎসবেও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে
  • বাড়তি চর্বি পোড়ানোর জন্য প্রতিদিন পরিশ্রম করতে হবে। হাঁটা, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, অল্প দূরত্বে গাড়ি বা রিকশায় না চড়ে হেঁটে চলার অভ্যাস করতে হবে। এগুলো শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, জগিং ইত্যাদি অভ্যাস করা ভালো। সুযোগ থাকলে ওজন কমানোর জন্য জিমেও যেতে পারেন

অতিরিক্ত ওজন মেদ ভূঁড়ি অতিস্থূলতা Obesity - চিকিৎসা

সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। এনিম্যাল ফুড অর্থাৎ প্রাণীজ খাবার বর্জন করুন তাহলেই আপনার ওজন অর্ধেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কোন প্রকার পার্শপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা বা মেদ ভূঁড়ি কমানোর জন্য এর সাথে আপনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও নিতে পারেন। এই অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা বা মেদ ভূঁড়ি সমস্যার পেছনে হরমোনাল কারণসহ বিভিন্ন ধরণের কারণ থাকে যা প্রপার হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। 
বিস্তারিত

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) কারণ লক্ষণ প্রতিকার প্রতিরোধ

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) হচ্ছে মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর শুরু হয় এবং এর সাথে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল এক থেকে বারো দিন তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে তা তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকে। অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত ৭২-৯৭% ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়।

রোগটি সাধারণত আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা ও ফুসকুড়ি নিয়ে শুরু হয়। ফুসকুড়ি রোগের শুরুতেই দেখা দিতে পারে তবে অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হয়। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা, ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, কনজাংটিভাইটিস। বড়দের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে প্রদাহ হতে পারে। এই রোগের উপসর্গকে অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বর এবং জিকা জ্বরের সাথে ভুল করে তুলনা করা হয়।

রোগের লক্ষণ সমূহ

  • রোগের শুরুতেই ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হতে পারে।অনিদ্রা হতে পারে।
  • গায়ে লাল লাল দানার মতো র‍্যাশ দেখা যেতে পারে।
  • কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
  •  চিকুনগুনিয়া জ্বরে অসহ্য মাথা ব্যথা হতে পারে। এই জ্বরে দীর্ঘসময় ধরে মাথা ব্যথার প্রভাব থাকতে পারে যা শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি ঘুমের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ব্যঘাত ঘটায়।
  • এই জ্বর হলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে বার বার বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
  • জ্বর এবং ব্যথায় কাতর হয়ে অনেকের মধ্যে অবসাদের প্রভাব দেখা যেতে পারে। ফলে কোন কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
  •  অনেক ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। আবার অনেক সময় চোখের ব্যথা এতটাই বেড়ে যায় যে আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হয় এবং চোখ জ্বালা করে।
  • সাধারণত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং উপসর্গগুলো বেশিদিন থাকে।
  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর ভালো হয়ে গেলে কয়েকদিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি লাগতে পারে কিন্তু সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে শরীর ব্যথা বা অন্য লক্ষণগুলো থাকে না।
  • আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়, যা অনেক সময় খুব ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়া রোগে ডেঙ্গু জ্বরের মতো রক্তক্ষরণ হয় না এবং রক্তের প্লাটিলেট খুব বেশি হ্রাস পায় না।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা বিশেষ করে ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR কিংবা সেরোলজির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দেখে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। এতে অনেক ক্ষেত্রে ২ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। এর রয়েছে উন্নত হোমিও চিকিৎসা। তবে এর জন্য এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।

প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো টিকা এখনও পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। এটি যেহেতু এডিস প্রজাতির মশাবাহিত রোগ, তাই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে। যেমন- ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতাযুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেয়া ইত্যাদি। শুধু স্ত্রী জাতীয়  মশা দিনের বেলা কামড়ায়। আবার এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। তাই দিনে ঘুমালেও অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এ মশার ডিম জলে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে অল্প পরিমাণ জমে থাকা জলও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। যেহেতু এডিস মশা স্থির জলে ডিম পাড়ে তাই যেন বাড়ির আশেপাশে জল জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত চারবার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে চিকুনগুনিয়া একবার হলে সাধারণত আর হয় না। এছাড়া অনেক বিষয়েই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের মধ্যে সাদৃশ্য আছে। এ রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশা প্রতিরোধ। এজন্য এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা এবং মশা নির্মূল করার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাবধানতাই একমাত্র এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা প্রাত্যহিক জীবনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে রোগী যদি হোমিও চিকিৎসার আওতায় চলে আসে তাহলে এই সকল জটিলতা থেকে রেহাই পেতে পারে।
বিস্তারিত

শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

দূরারোগ্য আইবিএস (IBS)! মল নরম কিন্তু (পেট) পায়খানা পরিষ্কার হয় না !

ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম বা আইবিএস (IBS) বলতে কতগুলো উপসর্গের সমষ্টিকে বুঝায় যা খাদ্যনালীর স্বাভাবিক কার্যকারিতার ব্যাঘাত ইঙ্গিত করে। যদিও খাদ্যনালীতে কোন প্রমাণযোগ্য জৈবিক রোগ থাকে না। সাধারণত বৃহদন্ত (কোলন) থেকে মিউকাস নিঃসৃত হয়। এই নিঃসরণ বিভিন্ন কারণে বাড়তে পারে। তাকে ভুল করে রোগীরা ক্রনিক আমাশয় ভাবেন।

বলতে গেলে আজকাল ক্রনিক আমাশয় প্রায় দেখা যায় না। তার বদলে দেখা যায় পায়খানায় অতিরিক্ত আম যায় যার আর এক নাম ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম (আইবিএস)। এই রোগে অন্ত্রের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায। তাই রোগীর গ্যাস, ঢেঁকুর, পেটভার, পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া ইত্যাদি হয়। উন্নত হোমিও চিকিৎসা না নিলে এ রোগ সারাজীবন চলে। এটা না আলসার, না ক্যান্সার, না টিবি। ইরিটেবল বাওল সিনড্রোমকে আগে নানাভাবে নাম দেয়া হয়েছিল। বলা হতো কোলাইটিস, মিউকাস কোলাইটিস, স্পাস্টিক কোলন অথবা স্পঙ্কি বাওল।

পাতলা পায়খানা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ ছাড়াও আইবিএস (IBS) এর ক্ষেত্রে আরো কিছু জটিল উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে যার মধ্যে রয়েছে - মল নরম হওয়া সত্ত্বেও পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া। বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে....
পাতলা পায়খানা  বা কোষ্ঠকাঠিন্য- এর মাঝে যেকোন একটি অথবা দুটোই একসাথে হতে পারে। সবসময় বিশেষ করে সকালের সময়টাতে বেশি মনে হতে পারে যে পেট পরিষ্কার হয়নি। সারাদিন এমন অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন। অনেক সময় পেটের বাঁ দিকে তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হতে দেখা যায়। পেট পরিষ্কার হলে এই ব্যথা কমে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে খাবার গ্রহণের পর ব্যথা অনুভূত হয় এবং মোশন আসতে পারে। ক্ষুধা কমে আসে। গলা ও বুকে জ্বালাপোড়া ভাব থাকতে পারে। সবসময় পেট ফাঁপা বা পেট ভার হয়ে থাকা ভাব অনুভূত হতে পারে। অনেকের আবার বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হয়েও যেতে পারে। শরীর সবসময় অবসাদগ্রস্থতায় বা ক্লান্তিতে ছেয়ে থাকতে দেখা যায়। এই রোগের চরম পর্যায়ে সাধারণত জ্বর জ্বর ভাব বা মলের সাথে রক্তপাত না হলেও আলাদাভাবে এসব উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

এই রোগের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা মূলতঃ হোমিওপ্যাথি। এর জন্য অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরী।
বিস্তারিত

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

ঘন ঘন প্রস্রাব এবং জ্বালাপোড়া ! কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI)

কিডনি ও মূত্রনালির সংক্রমণ Urinary Tract Infection (UTI).মানুষের শরীরের দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। আর এই তন্ত্রের যে কোন অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। এই সংক্রমণকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব এবং এর সাথে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এই সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। সাধারণত এই সমস্যাটি মহিলা ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে হলেও মহিলাদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হল UTI; প্রায় ৫০% মহিলাদের জীবনে একবার এই সংক্রমণ হয় এবং যে মহিলাদের একবার এই সংক্রমণ হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৮০% মহিলাদের পরে আবার UTI হতে দেখা যায়। UTI এর ফলে কিডনি, ব্ল্যাডার বা মূত্রথলী এবং জরায়ুতে প্রভাব পড়তে পারে, যার মধ্যে ব্ল্যাডারের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায় এবং এটি তত গুরুতর নয়।

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - প্রকারভেদ

কোথায় হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে একে আবার বিভিন্ন নামকরণ করা হয়ে থাকে -
  • ব্লাডার বা মূত্রথলিতে হলে একে বলে সিস্টাইটিস
  • ইউরেথ্রা বা মূত্রনালিতে হলে একে বলে ইউরেথ্রাইটিস
  • কিডনিতে হলে একে বলে পাইলোনেফ্রাইটিস
কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা, কিন্তু ঠিক মতো প্রস্রাব হয় না 
  • প্রস্রাব আটকে রাখতে অসুবিধা হতে পারে
  • প্রস্রাব করার সময় তীব্র ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে
  • শরীর দূর্বল অনুভত হতে পারে 
  • তলপেটে বা পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে
  • ঘোলা ও দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব বা কখনো কখনো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে
  • প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে বর্ণের হতে পারে
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালা বা ব্যথা হতে পারে
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ভাবের সাথে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে
  • ছোটদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া, জ্বর, খেতে না চাওয়া ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা যায়

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - কারণ

বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসমূহ বা বিরল ক্ষেত্রে ছত্রাক এর কারণ হয়ে থাকতে পারে। যেমন-
  • E. coli (Escherichia coli)
  • Proteus
  • Klebsiella
  • Pseudomonas
  • Enterobacter
  • Staphylococcus
  • Streptococcus

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - অন্যান্য কারণ

  • যদি কারো কিডনি অথবা মুত্রথলিতে পাথর থাকে তবে তা স্বাভাবিক মূত্রত্যাগে বাধা প্রদান করে। এর ফলেও ইনফেকশন হতে পারে।
  • অনেকক্ষণ যাবত প্রস্রাব আটকিয়ে রাখলে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। টেলিভিশন দেখার সময়, বাসে ট্রেনে যাতায়াত করার সময় বা জরুরী মিটিং-এর সময় অনেকেই প্রস্রাব আটকিয়ে রাখেন যা একদমই উচিত নয়।
  • যৌনসঙ্গীর ইউটিআই থাকলে শারীরিক মিলনের সময় অন্য সঙ্গীও সংক্রমিত হতে পারেন।
  • নিজস্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে ইউটিআই হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস, প্রেগন্যান্সি বা অন্য কোন রোগে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে থাকে তাহলে ইউটিআই হতে পারে।
  • অনেক সময় অপারেশনের আগে বা পরে রোগীদের ক্যাথেটার পড়ানো হয়। যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করতে পারেন না ক্যাথেটার দিয়ে পাইপের সাহায্যে তাঁদের মূত্র বের করা হয়। বেশিদিন ক্যাথেটার পরানো থাকলে খুব সহজেই তার ইউটিআই হতে পারে।
  • মহিলাদের মেনোপজ-এর পর ইস্ট্রোজেন-এর ক্ষরণ কমে যায়। ইস্ট্রোজেন মূত্রনালির সংক্রমণে বাধা দেয়। মেনোপজ-এর পর সেই সম্ভাবনা একদম থাকে না। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

Urinary Tract Infection (UTI) - Investigation

  • Blood Test for CBC
  • USG for KUB
  • Urine for C/S

কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ - প্রতিরোধ

  • সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন নিয়মিত ও পরিমিত পানি পান করা। 
  • সকালে ঘুম হতে উঠে খালি পেটে পানি পানের অভ্যাস গড়ে তোলা। 
  • প্রস্রাব আটকে না রাখা। 
  • যখনই বেগ আসে তখনই প্রস্রাব করা। 
  • কোষ্ঠ্যকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 
  • মূত্রত্যাগের পর যথেষ্ট পানি ব্যবহার করতে হবে। 
  • শারীরিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 
  • ডায়াবেটিস হলে প্রপার হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা। 
  • সহবাসের পূর্বে প্রস্রাব করা। এতে মূত্রনালিতে আসা সব জীবাণু পরিস্কার হয়। 
  • স্যানিটারী প্যাড ঘন ঘন বদলিয়ে নেওয়া।
  • মুসলমানি করানো হলে সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 
  • খুব আটসাট অন্তর্বাস না পরা। সুতী অন্তর্বাস পরিধান করা উত্তম।

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই - চিকিৎসা 

হোমিওপ্যাথিতে কিডনি ও মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারী ট্রাক্ট ইনফেকশন (UTI) উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। পেসেন্টের বিস্তারিত উপসর্গ পর্যালোচনা করে একটি প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট দিলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে। তবে এর জন্য এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া জরুরি।  
বিস্তারিত