আইবিডি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আইবিডি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২২

শিশুর মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধই হচ্ছে না ! করনীয় কি

বাচ্চাদের রক্ত আমাশয়, এনাল ফিসার, আইবিডি, আইবিএস, বিরল ক্ষেত্রে পাইলস ইত্যাদি হলো মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণের অন্যতম কিছু কারণ যেগুলির কার্যকর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রয়েছে। কোন শিশুর পায়খানার সময় মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে বহু ক্ষেত্রেই শিশুটির রক্ত আমাশয় হয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু যখন দেখা যায় এই সমস্যা কোন এন্টিবায়োটিক দিয়েও ঠিক হচ্ছে না তখন হয়তো শিশুর পিতামাতার টনক নড়ে উঠে।
 
রক্ত আমাশয় হলে শিশু পায়খানা করার সময় চাপ দিবে। রক্তের সঙ্গে পিচ্ছিল একটা পদার্থ এবং পায়খানাও থাকবে। আর যদি পলিপের জন্য হয় তাহলে টাটকা রক্ত যাবে। কোন ব্যথা থাকবে না।
শিশুর মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ
ক্রোন'স ডিজিস হলো শিশুদের মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরনের একটি বড় কারণ। এটি হলো আইবিডি এর একটি ধরণ এবং বড় রকমের একটি সংক্রমণ যা পাচন তন্ত্রের আস্তরণের আভ্যন্তরীণ অংশকে আক্রমণ করে। এছাড়াও এটি আবার কোলাইটিসের একটি রূপ হিসেবেও অভিহিত। এই সংক্রমণের ফলে অন্ত্রের মধ্যে আলসার হয়ে থাকে যা তীব্র প্রদাহের কারণ। এই আলসারগুলিই আবার মল পাস করার সময় ফেটে যেতে পারে এবং তার পরিণামে ডায়রিয়ার পাশাপাশি মলদ্বার থেকে রক্ত পড়তে থাকে।

আইবিএস IBS হিসেবে সুপরিচিত এই রোগটিতে বহু শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্করাও ভুগে থাকেন। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে অন্ত্র আলোড়ন বা মল ত্যাগ অনিয়মিত ধারায় হয়ে থাকে, যার পরিণামে কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে ডায়রিয়া বা আমাশয়ও হয়ে থাকে। এই লাগাতার আমাশয় অথবা ডায়রিয়ার উপস্থিতি এবং মল পাস করানোর জন্য অন্ত্রের পেশীগুলির তীব্র জোরাল আন্দোলন রক্ত কোষগুলিকে ফাটিয়ে দিতে পারে, যার ফলে মলদ্বারের মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

আরেকটি কারণে শিশুদের পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায় সেটি হলঃ এনাল ফিসার। আজকাল অতি আধুনিক পিতামাতার শিশুরা বাইরের খাবার, ফাস্টফুড, জাংফুড ইত্যাদির প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এগুলো খাওয়ার কারণে পায়খানা শক্ত হয় এবং এক সময় মলদ্বার ফেটে যায়। ফেটে গেলে পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসে। একে আমরা বলি এনাল ফিসার। এটাতে কিন্তু শিশুরা পায়খানা করতে চাইবে না। দেখবেন যখন বেগ হবে, লাফালাফি করছে। বসতে চাচ্ছে না। আর পায়খানা আঠার মতো লেগে থাকে এবং ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের পাইলসও হতে দেখা যায়।

শিশুর মলদ্বারে রক্তক্ষরণ: চিকিৎসা

কারণ যেটিই হোক, যখন দেখবেন এলোপ্যাথিক চিকিৎসকদের এন্টিবায়োটিক কেন তাদের কোন চিকিৎসাতেই কাজ হচ্ছে না বরং লাগাতার অযথা একের পর এক মেডিক্যাল টেস্ট দিয়ে দিয়ে শিশুর জীবন উল্টো দুর্বিষহ করে তুলছে তখন কাল বিলম্ব না করে দক্ষ এবং রেজিস্টার্ড একজন হোমিও চিকিৎসক খুঁজে বের করে প্রোপার চিকিৎসা নিবেন। মনে রাখবেন, এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় নতুন রোগ অর্থাৎ একিউট ডিজিস ভালো হলেও পুরাতন রোগ বা ক্রনিক ডিজিস আদৌ ভালো হয় না। সেগুলির একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি।

যা যা জেনেছেন 

  • বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় হলে কি করনীয়
  • বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় ঔষধ
  • পায়খানার রাস্তায় ব্যথা হলে করণীয়
  • বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত
  • বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় কেন হয়
  • পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার চিকিৎসা
  • পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কিসের লক্ষণ
বিস্তারিত

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি IBD - অলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজ

ইনফ্ল্যামেটরি বাওল ডিজিজ - আইবিডি হলো আমাদের পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত একটি জটিল সমস্যা। Inflammatory bowel disease - IBD মূলত কয়েকটি অসুখের একটি সম্মিলিত নাম। দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক রোগ এগুলো। ডায়রিয়া, পেটে ও বুকে ব্যথা, ওজন কমা, দুর্বলতাবোধ ইত্যাদি সাধারণ উপসর্গ থাকে রোগটিতে। আইবিডির মধ্যে দুটি রোগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে : ক্রনস ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। বাংলাদেশে ক্রনস ডিজিজের চেয়ে আলসারেটিভ কোলাইটিস বেশি হচ্ছে।

আগের পর্বে আপনারা আইবিএস সম্পর্কে জেনেছেন। ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় - আইবিডি আর ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম -আইবিএস এর মধ্যে তফাৎ মূলত কী? দুটোই কোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে আলাদা বিষয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে ভিতরে কোনও আলসার বা ঘা থাকে না। তাই কোলনস্কপি একদম পরিষ্কার রিপোর্ট দেয়। আর ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় হলে তাতে কোলনের ভিতরে ঘা থাকে।

পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজ দেখা যাচ্ছে।

আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজের সাধারণত লক্ষণগুলো অনেকটা একই রকম।
  • জ্বরজ্বর ভাব, দুর্বলতা এবং ক্লান্তিবোধ
  • পেটে ব্যথা,  কারো কারো পেট মোচড়ায়
  • অনেকের বমি বা বমি বমিভাব হয়
  • খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, চেষ্টা করেও খাওয়া যায় না
  • ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা 
  • পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, তবে সব সময় যে তাজা রক্ত যায় তা নয়
  • পায়খানায় রক্ত থাকার কারণে অনেক সময় ঘন কালো রঙের পায়খানাও হয়
  • কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকে
ক্রনস ডিজিজের মূল সমস্যা হলো আমাশয়, পেট ব্যথা এবং ওজন কমে যাওয়া। আলসারেটিভ কোলাইটিস সাধারণত বৃহদান্ত্র বা লার্জ ইনটেসটাইনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্রনস ডিজিস মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থানে হতে পারে। রোগ দুটি সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে।
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি

অলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative Colitis)

আমাদের কোলন বা বৃহদান্ত্রের প্রদাহকেই মূলত কোলাইটিস বলা হয়ে থাকে। আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয় যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোট ছোট আলসার বা ঘা গুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আলসারগুলো একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। এই রোগ জীনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে - রক্ত আমাশয়, পেটে ব্যাথা, মলদ্বারের ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। 
তবে রক্ত আমাশয়ই হলো এ রোগের বিশেষ লক্ষণ। কোন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি রক্ত আমাশয় থাকে, তাহলেই এ রোগ সন্দেহ করতে হবে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে। 

ক্রনস ডিজিজ (Crohn's Disease)

এই রোগে মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থান আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ইলিয়াম বা স্মল ইনটেসটাইনের একটি বিশেষ অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো কোলনও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ক্রনস ডিজিজ রোগে পরিপাকতন্ত্রের নালির গাত্রে স্কার বা ফাইব্রোসিস হতে থাকে এবং নালি সরু হয়ে যেতে থাকে। জটিলতা হিসেবে পায়খানার সমস্যা হওয়া, ফোড়া, ফিস্টুলাও হতে পারে। ক্রমাগত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা,  পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং টান ধরা, মলের সাথে রক্ত যাওয়া এর অন্যতম লক্ষণ।

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি - কারণ 

ঠিক কী কারণে আইবিডি হয় তা এখনো নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে কিছু বিষয় এ রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
  • পরিবারে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কারো এ রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
  • ধূমপান, মদ্যপান করলে ক্রনস ডিজিজ বেশি হতে দেখা যায়। তবে ধূমপায়ীদের আবার আলসারেটিভ কোলাইটিস কম হয়।
  • ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ যেমন - আইসোট্রেটিনন ব্যবহার করলে
  • দীর্ঘদিন ধরে এলোপ্যাথিক ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে। যেমন -আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ইত্যাদি
  • শহরের লোকের বেশি হয়, বিশেষ করে শিল্পকারখানার আশপাশে বা যেখানে বাতাসের দূষণ বেশি সেখানে বসবাসকারীদের এটি বেশি হতে দেখা যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাস, অন্ত্রের জীবাণু বা জীবাণুর সংক্রমণ এ রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদি আঁশজাতীয় খাবার, শাকসবজি কম খাওয়া হয়, তবে এ রোগ বেশি হয়।  বলা যায়, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতির কারণেই পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি সাধন হয়ে এ অসুখগুলো হয়।

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - জটিলতা

এ রোগ দুটির নানা প্রকার উপসর্গসহ দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন জটিলতা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি এ রোগের কারণে অনেক বেড়ে যায়। আরো কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
  • অ্যানাল ফিস্টুলা হতে পারে
  • অপুষ্টিজনিত অসুখবিসুখ হয়
  • কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়
  • শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন - চোখ, অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া, অস্টিওপরোসিস, লিভারের প্রদাহ ইত্যাদি
  • শিশুর শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - রোগ নির্ণয়

রোগের লক্ষণসহ কিছু রুটিন পরীক্ষা যেমন -রক্ত, পায়খানা, পেটের এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যদি এ রোগ নির্ণয়ে সহায়ক। তবে রোগ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করার জন্য কলোনোস্কোপি, এন্টারোস্কোপি, ফ্লেক্সিবল সিগময়ডোস্কোপি ও এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করা হয়। অনেক সময় বায়োপসি করেও রোগ নির্ণয় সম্ভব করা যায়। পেটের সিটিস্ক্যান, এমআরআইও মাঝে মধ্যে এ রোগ শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - চিকিৎসা

আগেই বলেছি এ রোগ নিরাময়ের কোন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নেই। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ডাক্তারগণ পর্যন্ত লক্ষণনির্ভর বা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের হাতে এই রোগ স্থায়ী ভাবে সারানোর মতো কোন ঔষধ নেই এলোপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্রে অর্থাৎ আপনাকে সব সময় ঔষধ খেয়ে যেতে হবে ভালো থাকার জন্য। চিকিৎসা প্রধান উদ্দেশ্য হল অন্ত্রের প্রদাহ কমানো এবং উপসর্গগুলি থেকে স্বস্তি দেওয়া। জটিলতার ক্ষেত্রে সার্জারির করার পরামর্শ দিয়ে থাকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা।

রোগ নিয়ন্ত্রণের কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যয়বহুল। আবার কিছু ওষুধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগ ভালো না হলে সার্জারি বা অপারেশন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা। সাধারণত ক্রনস ডিজিজে আক্রান্তের অর্ধেকেরই সার্জারি করা হয়ে থাকে ।

এলোপ্যাথি এই সকল রোগ নির্মূল করতে ব্যর্থ হলেও এটা কখনই মনে করবেন না যে - আপনি এর থেকে মুক্তি পাবেন না। কারণ এই রোগসমূহ স্থায়ী ভাবে নির্মূল করার চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি - বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানেন না। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত যেকোন প্রকার রোগে হোমিওপ্যাথি দারুন কার্যকর। তবে মনে রাখবেন - এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরে অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রপার ট্রিটমেন্ট নিলে এই সকল রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

আলসারেটিভ কোলাইটিস - ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইবিডি IBD

ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি Inflammatory bowel disease - IBD একটি রূপ হলো Ulcerative Colitis আলসারেটিভ কোলাইটিস। আমাদের কোলন বা বৃহদান্ত্রের প্রদাহকেই মূলত কোলাইটিস বলা হয়ে থাকে। এ রোগ বৃহদান্ত্রের প্রদাহ হয়ে অন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেনে ক্ষত সৃষ্টি করে। কোন অঞ্চলে হয়েছে এবং রোগের মাত্রা কেমন তার ওপর নির্ভর করে এর ধরন নির্ণয় করা হয়। যেমন -
  • আলসারেটিভ প্রক্টাইটিস (Ulcerative proctitis) - রেক্টাম বা মলদ্বার পর্যন্ত সীমিত থাকে
  • প্রক্টসিগময়েডাইটিস (Proctosigmoiditis) - রেক্টাম ও সিগময়েড জড়িত
  • লেফট সাইডেড কোলাইটিস (Left-sided colitis) - বাঁ দিকের কোলনটি জড়িত
  • প্যানকোলাইটিস (Pancolitis) - পুরো কোলনকেই আক্রান্ত করে
  • অ্যাকিউট সিভিয়ার আলসারেটিভ কোলাইটিস (Acute severe ulcerative colitis) - পুরো কোলনকেই আক্রান্ত করে
পেটের একটি দুরারোগ্য পীড়া বলেই বিবেচিত হয় আলসারেটিভ কোলাইটিস। হোমিওপ্যাথি ছাড়া প্রচলিত অন্যান্য ট্রিটমেন্ট সিস্টেমে এর তেমন কোন ভাল চিকিৎসা নেই। শুধুমাত্র প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিলেই এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। অন্য সকল চিকিৎসা শাস্ত্র এই রোগের উপসর্গকে সাময়িক ভাবে কমিয়ে রাখার চিকিৎসা দিতে থাকে এবং সাথে সাথে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে উপদেশ দিয়ে থাকে।

পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তাই আমাদের দেশের মানুষের এই অসুখটি সাথে খুব একটা পরিচিতি ছিল না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজ হতে দেখা যাচ্ছে।
অলসারেটিভ কোলাইটিস
আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয় যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোট ছোট আলসার বা ঘা গুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আলসারগুলো একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। এই রোগ জীনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে -

আলসারেটিভ কোলাইটিস - উপসর্গসমূহ

  • ডায়রিয়ার সাথে রক্ত পড়া বা রক্ত আমাশয় হলো আলসারেটিভ কোলাইটিসের প্রধান লক্ষণ
  • রক্ত বা পুঁজ মিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে থাকে
  • রোগের তীব্রতা কম থাকলে দিনে মোটামুটি ৪/৫ বার পাতলা পায়খানা হতে পারে
  • রোগের তীব্রতা খুব বেশি হলে দিনে ৬-১০ বার পর্যন্ত পায়খানা হতে পারে
  • পায়খানার সাথে আমাশাও থাকতে পারে
  • মলদ্বার দিয়ে অনেক সময় মিউকাস বের হয়
  • পায়খানার বেগ আসা মাত্রই ছুটতে হয়
  • তল পেট মোচড় দেয় এবং অনেক সময় তীব্র পায়খানার বেগ হয়
  • সাধারণত তলপেটের বাম পাশে ব্যথা থাকে যা পায়খানা হবার পর কিছুটা কমে যায়
  • গায়ে জ্বর থাকতে পারে
  • পায়খানার সাথে রক্ত যাবার ফলে রোগীর রক্তসল্পতা দেখা দেয়
  • মলদ্বারে ব্যথা হতে পারে
  • অরুচি, অস্বস্তি হয়, ওজন কমে যেতে পারে
আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ-এর (আইবিডি) একটা রূপ কিন্তু তা ইরিটেব্‌ল বাওয়েল সিনড্রোম - আইবিএস বা ক্রনস ডিজিজ থেকে আলাদা। ইরিটেব্‌ল বাওয়েল সিনড্রোম হলো একটি পরিচিত পেটের পীড়া যা পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের আরো কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে। যাই হোক, আলসারেটিভ কোলাইটিস-এ বৃহদন্ত্রের প্রদাহ ঘা এবং ক্ষত দেখা যায়।

ক্রনস ডিজিজ পরিপাক নালীর যেকোন অংশকে আক্রমণ করতে পারে কিন্তু আলসারেটিভ কোলাইটিস প্রধানতঃ বৃহদন্ত্রের নীচের অংশ (মলদ্বার) আক্রমণ করে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ কোলনকে আক্রমণ করতে পারে।

আলসারেটিভ কোলাইটিস - কারণ

আলসারেটিভ কোলাইটিসের নির্দিষ্ট কারণ এখনো অজানা। তবে উপরি উপরি চিন্তা করে যে সব কারণে রোগটি হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায় সেগুলো হল -
  • জিনগত বা পারিবারিক ইতিহাস
  • অত্যধিক মানসিক দুশ্চিন্তা
  • ইনফেকশন জনিত কারণ
  • গ্যাসট্রোএন্টেরাইটিস জনিত কারণ
  • অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ
  • NSAID গ্রুপের ওষুধ অত্যধিক গ্রহণ

আলসারেটিভ কোলাইটিস - রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা

  • রক্ত পরীক্ষা করলে হিমোগ্লবিন কমে যায় এবং ইএসআর বেড়ে যায়
  • সিগময়ডোস্কোপি
  • কোলোনোস্কপি
  • বেরিয়াম ইনেমা
  • আলট্রাসনোগ্রাফি
  • এমআরআই
  • সিআরপি
কোলনস্কপি এবং সিগময়েডস্কপি যান্ত্রিক এই পদ্ধতি ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। প্রথমে কোলনস্কপিই করা হয়। এই রিপোর্টে পুরো কোলন ক্ষতিগ্রস্ত ধরা পড়লে, বারবার কোলনস্কপিই করতে হয়। আর কোলনের বাঁ দিকটা ক্ষতিগ্রস্ত কি না সেটা দেখতে করা হয় সিগময়েডস্কপি।

আলসারেটিভ কোলাইটিস - জটিলতা

সময় মতো চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন জটিলতা তৈরী হতে পারে যদিও জটিলতাগুলি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • কোলন ক্যান্সার হতে পারে
  • দেহের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, যেমন-কোমর,মেরুদণ্ড, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি, হাতের জয়েন্টে
  • চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল দাগ অথবা আলসার হতে পারে
  • চোখের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগ হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারে
  • মুখ, হাত ও পায়ে পানি এসে শরীর ফুলে যেতে পারে এবং 
  • জন্ডিস হতে পারে, লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে

আলসারেটিভ কোলাইটিস - চিকিৎসা 

হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে আলসারেটিভ কোলাইটিস এর কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই। বর্তমান বিশ্বে এর একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা হল হোমিওপ্যাথি। অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে এই সমস্যার উপসর্গকে কমিয়ে রাখার চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে এবং জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোগীর নিজের বিস্তারিত জেনে এবং নিকট আত্মীয়ের হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে যত্ন নিয়ে চিকিৎসা করলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা স্থায়ীভাবে সেরে উঠে এক মাত্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়। 
বিস্তারিত

ক্রনস ডিজিজ Crohn's disease - ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি IBD

যন্ত্রণাদায়ক পেটের পীড়া ক্রনস ডিজিজ Crohn's disease হল ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - আইবিডি বা Inflammatory bowel disease - IBD এর একটি রূপ। এই রোগে মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থান আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত  স্মল ইনটেসটাইনের একটি বিশেষ অংশ ইলিয়াম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো কোলনও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ রোগে পরিপাকতন্ত্রের নালির গাত্রে স্কার (ক্ষত) বা ফাইব্রোসিস হতে থাকে এবং নালি সরু হয়ে যেতে থাকে। জটিলতা হিসেবে পায়খানার সমস্যা হওয়া, ফোড়া, ফিস্টুলাও হতে পারে।

পুরুষ মহিলা যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে প্রায় ৩ মিলিয়ন আমেরিকান আইবিডি এর সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগ যেকোন বয়সেই হতে পারে তবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেই বেশি হতে দেখা যায়।

পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও ক্রনস ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস হতে দেখা যাচ্ছে। একটি তুলনামুলক সমীক্ষাতে জানা গেছে যে, এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ভারতেই সবচাইতে বেশি।
ক্রনস ডিজিজ

ক্রনস ডিজিজ -টাইপ

পরিপাক তন্ত্রের কোন স্থানে হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে একে বিভিন্ন টাইপে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন -
  • Ileocolitis - ক্ষুদ্রান্ত বা স্মল ইন্টেস্টাইনের শেষ প্রান্ত যাকে বলা হয় ইলিয়ামের শেষ প্রান্ত এবং কোলনকে আক্রান্ত করে। 
  • Ileitis - শুধু ইলিয়ামকে আক্রান্ত করে 
  • Gastroduodenal Crohn's Disease - পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত বা স্মল ইন্টেস্টাইনের প্রথম দিক অর্থাৎ ডিউডেনামকে আক্রান্ত করে 
  • Jejunoileitis - ক্ষুদ্রান্ত বা স্মল ইন্টেস্টাইনের উপরের অর্ধাংশ অর্থাৎ জেজুনাম আক্রান্ত করে 
  • Crohn's (Granulomatous) Colitis - বৃহদান্ত্র অথাৎ কোলনকে আক্রান্ত করে 

ক্রনস ডিজিজ - উপসর্গ

  • ক্রমাগত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
  • জ্বর, ক্লান্তিবোধ
  • মুখে ঘা হওয়া
  • পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং টান ধরা
  • পেটে জ্বালাপোড়াসহ ব্যথা
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • ঢেঁকুর আসা, বুক জ্বালা
  • মলের সাথে রক্ত যাওয়া
  • মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ
  • পায়ুপথে ব্যথা হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া

ক্রনস ডিজিজ - কারণ

  • বংশে কারো ক্রনস ডিজিজ থাকলে এই রোগে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব
  • পরিবেশের প্রভাব, যেমন শহরে বসবাস করা 
  • ফ্যাট সমৃদ্ধ ও পরিশোধিত খাবার খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • পূর্ব ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

ক্রনস ডিজিজ - প্রতিরোধ

ক্রোনস ডিজিজ প্রতিরোধ করার জন্য যেগুলি করা দরকার
  • এনিম্যাল ফুড বা প্রাণীজ খাদ্য পরিহার করুন
  • প্লান্ট বা উদ্ভিজ্জ খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করুন 
  • ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। চেষ্টা করুন ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করার। তাহলে এই রোগ থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকতে পারবেন
  • মদ্য পানের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করুন 
  • রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলার জন্য নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন
  • গবেষণায় দেখা গেছে, শিল্প,কারখানা আছে এরকম জায়গার আশেপাশে বাস করলে ক্রোন ডিজিজের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা দরকার। আর পরিবেশ সম্পর্কে একটু বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন

ক্রনস ডিজিজ - চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে ক্রনস ডিজিজ এর কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই। বর্তমান বিশ্বে এর একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা হল হোমিওপ্যাথি। অন্যান্য চিকিৎসা শাস্ত্রে এই সমস্যার উপসর্গকে কমিয়ে রাখার চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে এবং জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোগীর নিজের বিস্তারিত জেনে এবং নিকট আত্মীয়ের হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে যত্ন নিয়ে চিকিৎসা করলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা স্থায়ীভাবে সেরে উঠে এক মাত্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়। 
বিস্তারিত