যক্ষ্মা অর্থাৎ Tuberculosis (TB) টিবি - পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন রোগগুলির মধ্যে একটি। যক্ষা বা টিবি ল্যানেন্ট বা সুপ্ত, প্রি-ডোমিনেন্ট, অ্যাকটিভ এই তিন টাইপের হয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক, আমি ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান আর এ পর্বে আমি আলোকপাত করবো- যক্ষা বা টিবি রোগের টাইপ, কারণ, লক্ষণ এবং এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত এলোপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। আমরা আরো জানবো টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট থাকলে আপনার শরীরে জেগে উঠা জটিল জটিল স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি স্থায়ীভাবে নির্মূলের জন্য বিশ্বের একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা কি রয়েছে সে সম্পর্কে।
সমাজের অনেকেই আছেন যারা একটিভ টিউবারকুলার পেসেন্টদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন। এমনকি বিয়ে-সাদী বা বন্ধুত্ব পর্যন্ত করতে চায় না। কিন্তু ডায়াবেটিস, হার্ট, লিভার বা কিডনি বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেরূপ দৃষ্টিতে দেখা হয় না। যারা টিউবারকুলার পেসেন্টদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন তাদের এটাও জেনে রাখা উচিত, টিউবারকুলার পেসেন্টরা পৃথিবীর ভালো মানুষগুলির মধ্যে অন্যতম। আপনি তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হলে বা বন্ধত্ব করলে কখনও ঠকবেন না বা প্রতারিত হবেন না যদি তার মধ্যে অন্যান্য True Disease প্রিডোমিন্যান্ট না থাকে। কারণ এই লোকগুলি মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারলেই আনন্দ পায়।
মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামক একটি জীবাণু এই রোগের কোসেটিভ এজেন্ট। যক্ষ্মা রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় ফুসফুস, যদিও হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি ছাড়া শরীরের প্রায় যেকোন অঙ্গেই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে এমনকি কিডনি, মেরুদন্ড অথবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। বলতে গেলে আমাদের এমন কোন অঙ্গ নাই, যেখানে যক্ষ্মা হয়না। যতগুলো যক্ষ্মা বা TB রয়েছে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই ফুসফুসে হয়ে থাকে এবং এটি সবচেয়ে গুরুতর ও ভীষণ ছোঁয়াচে প্রকৃতির। শরীরের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যক্ষ্মা এতোটা ছোঁয়াচে নয়। তাই সেগুলি ফুসফুসের যক্ষ্মার মতো ছড়ানোর ক্ষেত্রে ততটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সুতরাং আমরা দেখছি টিবি বা যক্ষ্মা সেটা শ্বাসতন্ত্রীয় বা Pulmonary এবং অ-শ্বাসতন্ত্রীয় বা Extra pulmonary হয়ে থাকে। পরবর্তী পর্বগুলোতে আপনারা আরো জানতে পারবেন-
জীবাণু শরীরে ঢুকলেই কিন্তু যক্ষ্মা অ্যাকটিভ হয়ে যায় না বরং কিছু ক্ষেত্রে ল্যানেন্ট বা সুপ্ত অবস্থায় থাকে আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রি-ডোমিনেন্ট অবস্থায় থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে অর্থাৎ যখন যাকে সুবিধা করতে পারে তার শরীরেই যক্ষ্মা সরাসরি আত্মপ্রকাশ করে থাকে যাকে আমরা অ্যাকটিভ টিবি বলে থাকি।
অ্যাকটিভ টিবির ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ জেলা-উপজেলা স্বাস্থ কেন্দ্রে বা বিভিন্ন দাতব্য চিকিৎসালয়ে ফ্রি বা বিনা মূল্যে আপনি চিকিৎসা পাবেন। তবে সেগুলিতে বিনামূল্যে শুধু ঔষধ দেয়া হয় এবং কাশির পরীক্ষাটি করা হয়। এর বাইরে যেমন এক্সরে, সিটি স্ক্যান বা যক্ষ্মা সম্পর্কিত অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা বা চিকিৎসা কিছুই বিনামূল্যে হয়না, এমনকি বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও সব বেড ফ্রি নেই।
যক্ষ্মা হলেই যে তা ছোঁয়াচে হবে এমন কিন্তু নয়। ল্যানেন্ট বা সুপ্ত অবস্থায় ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মার জীবানু প্রবেশ করলেও শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সামনে সেটি মাথা তুলতে পারে না। ফলে ল্যানেন্ট টিবিতে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। আবার প্রি-ডোমিনেন্ট অবস্থায় যখন রোগীর ব্যক্তির ভাইটাল ফোর্স ততটা শক্তিশালী অবস্থায় থাকে না তখন শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ বাউপসর্গ তৈরি করে কষ্ট দিয়ে থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের রোগীর শরীরে যে কোনও সময় যক্ষ্মার জীবানু অ্যাকটিভ হয়ে উঠতে পাতে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্যের দেহে জীবানু সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে।
যক্ষ্মা বা টিবি - প্রকারভেদ
- ল্যানেন্ট বা সুপ্ত টিবি
- প্রি-ডোমিনেন্ট টিবি
- অ্যাকটিভ টিবি
ল্যানেন্ট বা সুপ্ত টিবি: এই কন্ডিশনে টিবি সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে কোন কারণে ব্যক্তির ভাইটাল ফোর্স দুর্বল হয়ে পড়লেই ল্যাটেন্ট টিবি অ্যাকটিভ হয়ে উঠতে পারে।
প্রি-ডোমিনেন্ট টিবি: প্রথমেই আসুন জেনে নিই কোন শর্তে আপনি বুঝবেন টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট!
- প্রথমতঃ আপনি পূর্বে একবার টিবিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন আর ট্র্যাডিশনাল ট্রিটমেন্ট সিস্টেমে ৬ মাস, ৯ মাস, ১২ মাস ইত্যাদি কোর্সে ঔষধ খেয়ে অ্যাকটিভ টিবি কিছুটা রেসিসিভ করেছেন।
- দ্বিতীয়তঃ আপনি নিজে টিবিতে আক্রান্ত হননি কিন্তু আপনার নিকট আত্মীয় যেমনঃ মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী কেউ না কেউ টিবিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, প্রি-ডোমিনেন্ট টিবির কোন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নেই তবে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে প্রি-ডোমিনেন্ট টিবিকে রেসিসিভ করা যায়। এক্ষেত্রে মূলত শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট থাকলে যে যে সমস্যা জেগে উঠতে পারে
- আইবিএস, ক্রনিক ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা প্রকার পেটের অসুখ
- হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডার দোষ
- ফুসফুসের নানা সমস্যা
- স্বরযন্ত্রের সমস্যা
- হার্টের সমস্যা
- লিভারের সমস্যা
- কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের সমস্যা
- পুরুষদের অর্কাইটিস ও বন্ধ্যাত্ব
- নারীদের ডিম্বাশয়ের সমস্যা ও বন্ধ্যাত্ব
- নানা প্রকার মানুষিক সমস্যা
- নানা প্রকার চর্মরোগ
- মাইগ্রেন বা দুরারোগ্য মাথা ব্যথা
- পাইলস, ফিস্টুলা, মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ
- নানা প্রকার ক্যান্সার
- শরীর শুকিয়ে যাওয়া
- টিবি একটিভ হয়ে উঠতে পারে
- ইত্যাদি
অ্যাকটিভ টিবি: অ্যাকটিভ টিবি দু'ধরণের হতে পারে-
- শ্বাসতন্ত্রীয় টিবি বা যক্ষ্মা বা Pulmonary Tuberculosis (TB)
- অ-শ্বাসতন্ত্রীয় টিবি বা যক্ষ্মা বা Extra pulmonary Tuberculosis (TB)
শ্বাসতন্ত্রীয় টিবির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে
- ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে
- কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া
- কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই টিবি
- সাধারনত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি
- জ্বর থাকে - সন্ধ্যার দিকে জ্বর আসা
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া
- অবসাদ অনুভব করা
- রাতে ঘাম হওয়া
- বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা
- ইত্যাদি
অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষা বা Extra pulmonary Tuberculosis
যক্ষা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তখন একে অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষা বা Extra pulmonary Tuberculosis বলা হয়। তখন আক্রান্ত অঙ্গের অবস্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ পরিলক্ষতি হয়ে থাকে। অ-শ্বাসতন্ত্রীয় টিবি বা যক্ষার মধ্যে রয়েছে-
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস (TB Meningitis)
- প্রজনন তন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা (Genitourinary TB)
- পরিপাক তন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষা (Gastrointestinal TB)
- লিভার সংক্রান্ত টিবি (TB of the Liver)
- হাড় এবং জয়েন্ট টিবি (TB of Bones and Joints)
- হৃদঝিল্লি সংক্রান্ত টিবি (TB Pericarditis)
- ত্বক সম্পর্কিত টিবি (Cutaneous Tuberculosis)
- পেট বা উদর সংক্রান্ত টিবি (TB Peritonitis)
- লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা (TB Lymphadenitis)
মিলিয়ারি টিবি Miliary Tuberculosis (TB)
কখনো কখনো টিবি বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত স্থান থেকে কোন না কোন ভাবে যক্ষ্মা জীবাণু রক্তস্রোতে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট টিউবারক্যালসের সৃষ্টি হয়। এভাবে সারা শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। যাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হয়। এক্সট্রা পালমোনারি টিবি'র মধ্যে মিলিয়ারি টিবিই সব থেকে ভয়াবহ। চিকিৎসা না করলে ৯৫ ভাগ রোগীরই মৃত্যু হয়। মিলিয়ারি টিবিতে সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি জ্বর হতে পারে এবং রোগী অস্বস্তিবোধ করে।
যক্ষ্মা বা টিবি রোগ নির্নয়ের জন্য পরীক্ষা
- রক্তের পরীক্ষা
- কফ পরীক্ষা
- জিন এক্সপার্ট টেস্ট
- ত্বকের পরীক্ষা
- বুকের এক্স-রে
- সিটি স্ক্যান
- কালচার টেস্ট
যক্ষ্মা বা টিবি রোগের চিকিৎসা - এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি
অ্যাকটিভ টিবির ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ জেলা-উপজেলা স্বাস্থ কেন্দ্রে ফ্রি বা বিনা মূল্যে আপনি চিকিৎসা পাবেন। তবে বিনামূল্যে শুধু ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে এবং কাশির পরীক্ষাটি করা হয়। এর বাইরে যেমন এক্সরে, সিটি স্ক্যান বা যক্ষ্মা সম্পর্কিত অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা বা চিকিৎসা কিছুই বিনামূল্যে হয়না, এমনকি বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও সব বেড ফ্রি নেই। তথ্যসূত্র: বিবিসি (www.bbc.com/bengali/news-51447395)
টিবি বা যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকগুলি নির্ধারিত হয় সেগুলি হল আইসোনিয়াজিড, রিফাম্পিসিন, পাইরাজিনামাইড এবং ইথামবুটল বা রাইফেটার নামক একটি সংমিশ্রণ। রিফটার সাধারণত দুই মাস ব্যবহার করা হয়। ডোজ নিজেই রোগীর শরীরের ওজনের সাথে সামঞ্জস্য করা হবে। জেনে রাখা ভালো, রাইফটারে এলোপ্যাথিক জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সাথেও Contraindications রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য সকল এলোপ্যাথিক ওষুধের মতো টিবি ঔষধেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এলোপ্যাথিতে টিবি রোগের চিকিৎসা কালীন প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের যে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় সেগুলির মধ্যে রয়েছে-
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- পেটে ব্যথা হয়
- বুকে ব্যথা এবং উত্তাপ সংবেদন
- অতিসার বা পাতলা পায়খানা হওয়া
- পেশী ব্যথা এবং জয়েন্টে ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- ত্বকে ফুসকুড়ি এবং চুলকানি
- মাথা ঘোরা
- বার বার কানে কানে বাজে
- অলসতা ইত্যাদি
তবে এলোপ্যাথিতে টিবি ওষুধ প্রয়োগ করার পর নিম্ন লিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন-
- ফোলা ফোলাসহ জোড়ের ব্যথা
- চোখ হলুদ হয়ে যায়
- প্রস্রাবের পরিমাণে পরিবর্তন
- তৃষ্ণা বেড়ে গেলে
- রক্তাক্ত প্রস্রাব
- দৃষ্টি পরিবর্তন
- দ্রুত হার্টবিট সমস্যা
- সহজ ক্ষত বা রক্তপাত
- জ্বর
- মেজাজ পরিবর্তন যেমন বিভ্রান্তি, এবং অনুভূতি বা দেখা বা শোনা যায় এমন বিভ্রান্তির অভিজ্ঞতা
- খিঁচুনি
টিবির এলোপ্যাথিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও জটিলতা (পরবর্তীতে)
কারো শরীরে কিছু দিন যাবৎ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে শরীরের অবস্থা কিরূপ দাঁড়ায় সেটা সকলেরই জানা। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্রমাগত উচ্চশক্তির এন্টিবায়োটিক ঔষধ যদি কারো শরীরে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে যে নানা প্রকার ভয়ানক জটিলতার সৃষ্টি হবে সেটা একজন সাধারণ মানুষ মাত্রই অনুমান করতে পারেন। টিবির এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পর দেখবেন, একের পর এক শরীরে নানা রকম সমস্যা জেগে উঠছে। এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা তখন রোগ নির্ণয়ে হাতড়িয়ে মরে এবং খুঁজেই পায় না কি থেকে কি হচ্ছে। টিবি পরবর্তী জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছে আইবিএস, ক্রনিক ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা প্রকার পেটের অসুখ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডার দোষ, ফুসফুসের নানা সমস্যা, পুরুষদের অন্ডকোষের সমস্যা যেমনঃ অর্কাইটিস, ভেরিকোসিল, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি, পাইলস, ফিস্টুলা, মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ ইত্যাদি, নানা প্রকার মানুষিক সমস্যা, মাইগ্রেন বা দুরারোগ্য মাথাব্যথা, হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অন্যতম।
হতে পারে সেগুলি টিবির কারণে বা টিবির এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে জেগে উঠেছে। যদি চিকিৎসা কালীন ক্রমাগত উচ্চশক্তির এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রয়োগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে নানা সমস্যা জেগে উঠে তাহলে হোমিও চিকিৎসায় এই জটিলতা কাটানো অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তবে অসম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিলে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে আসে।
একটিভ টিবির এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিলেও আপনাকে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূর করতে অথবা প্রিডোমিনান্ট টিবির ভয়ঙ্কর জটিলতাকে দূর করতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাই নিতে হবে পরবর্তীতে। এখানে দ্বিতীয় আর কোন কার্যকর অপশন নেই।
টিবির চিকিৎসাকালীন পরামর্শ
যাই হোক, চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করার কারণে লোকজন টিবিতে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক চিকিৎসাই নিয়ে থাকেন। সরকারি হাসপাতালে বা বিভিন্ন দাতব্য চিকিৎসালয়ে ৬ মাস, ৯ মাস, ১২ মাস ইত্যাদি কোর্সে আপনাকে বিনামূল্যে এলোপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা দিবে। তবে কিছু দিন ঔষধ খেয়ে টিবি ভালো হয়ে গেছে ভেবে মাঝ পথেই ঔষধ খাওয়া বন্ধ করলে আপনি আরো জটিল টিবিতে আক্রান্ত হবেন যাকে বলা হয় ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা মাল্টিড্র্যাগ রেজিস্টেন্ট টিবি - এমডিআর (MDR TB) অথবা (RR TB) আরআর টিবি - রিফাম্পিসিন রেজিস্ট্যান্স টিবি। রিফাম্পিসিন টিবির একটি বহুল ব্যবহৃত ঔষধ।
এমডিআর বা আরআর টিবিতে আক্রান্ত অবস্থায় এক বা একাধিক ঔষধ রোগীর শরীরে কাজ করতে চায় না। সাধারণত টিবি রোগের চিকিৎসা কালে অনিয়মিত ঔষধ সেবন বা ঔষধের কোর্স শেষ না করা বা অন্য কোন এমডিআর টিবি রোগীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ একত্রে বসবাস করলে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
তাই অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে ঔষধ খেয়ে যাবেন। যেদিন সেখানকার চিকিৎসক আপনাকে ঔষধ বন্ধ করতে বলবেন তখনই আপনি ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন। পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে ঔষধ খাওয়ার পর যেদিন চিকিৎসক আপনাকে ছুটি দিবেন তখন হয়তো আপনি প্রাণে বেঁচে যাবেন অর্থাৎ টিবির বহু লক্ষণ উপসর্গ থেকেই আপনি মুক্তি পেয়ে যাবেন। তখন আপনি অ্যাকটিভ টিবির পেশেন্ট থাকবেন না তবে টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট থাকবে আপনার শরীরে।
অনেক এলোপ্যাথিক চিকিৎসকই মনে করেন একবার তাদের চিকিৎসায় টিবি ভাল হয়ে গেলে সেটা আর দ্বিতীয়বার হয় না এবং তার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক বাস্তব দর্শন ভিন্ন কথা বলে। জেনে রাখা ভালো, Tuberculosis is results of disease and also one way disease. একবার দেহ-মনে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। টিবির জেনেটিক ম্যাটারিয়াল পরবর্তী প্রজন্মে ট্রান্সফার হয় এবং তারাও টিবিতে আক্রান্ত হতে পারে অথবা তাদের DNA তে টিবির জেনেটিক ম্যাটারিয়াল প্রি-ডোমিনেন্ট থাকার ফলে নানা প্রকার দুরারোগ্য স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে কার শরীরে কি তীব্রতায় রোগ-ব্যাধি জেগে উঠবে সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির ভাইটাল ফোর্সের সক্ষমতা এবং DNA তে প্রি-ডোমিনেন্ট অন্যান্য True Disease এর উপস্থিতি বা অবস্থার উপর।
টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট থাকলে আপনি কি কি স্বাস্থ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন ইতিমধ্যেই সেগুলি আপনারা জেনেছেন। আর টিবি প্রি-ডোমিনেন্ট থাকা কালে যেকোন স্বাস্থ সমস্যায় আপনাকে কার্যকর রেজাল্ট দিবে একমাত্র হোমিওপ্যাথি এছাড়া টিবি রোগের একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতিও হলো হোমিওপ্যাথি। তবে এর জন্য আগে দক্ষ এবং রেজিস্টার্ড একজন হোমিও ডাক্তার নির্বাচন করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।
আপনি জানেন কি ? টিবি বা যক্ষা সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিক দর্শন কি বলছে ? পৃথিবীতে টিউবারকুলার পেশেন্টরাই সবচেয়ে ভালো মানুষ হয়ে থাকে। তারা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। সমস্ত পৃথিবীটাকে তারা তাদের নিজেদের মনে করে। আকাশটাকে ভাবে নিজেদের ছাদ। পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ভাবে নিজেদের আপনজন। তারা মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারলেই আনন্দ পায়।
যা যা জেনেছেন
- টিবি রোগ কি
- যক্ষা রোগ কি ছোঁয়াচে
- যক্ষা রোগের ঔষধ কি
- যক্ষা রোগের পরীক্ষা
- যক্ষা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- যক্ষা হলে রক্ষা নাই
- টিবি রোগের লক্ষণ কি কি
- টিবি রোগ হলে করণীয়
- টিবি রোগের ঔষধ কি
- যক্ষা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- গ্লান্ড টিবি কি
- টিবি রোগ কি কারনে হয়
- এমডিআর টিবি
- বোন টিবি লক্ষণ
- পেটের যক্ষা
- টিবি রোগের হোমিও চিকিৎসা
- টিবি রোগের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤