মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার

হাই প্রেশার বা হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা খুবই কার্যকর এবং পার্শপ্রিতিক্রিয়াবিহীন। যেখানে এলোপ্যাথিক পার্শপ্রিতিক্রিয়াযুক্ত ঔষধ সারা জীবন ধরে খেয়ে যেতে হয় সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দিলে বহু রোগীরাই ঠিক হয়ে উঠছেন। তবে জটিল ক্ষেত্রে একটি মাত্র হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিন একবার করে নিয়মিত খেয়ে গেলেও ভালো থাকছেন সবাই। হোমিওপ্যাথিতে এই সমস্যার যেমন ভালো ও কার্যকর ঔষধ রয়েছে তেমনি অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছে।

উচ্চ রক্তচাপ কী

এবার আসুন হাইপারটেনশন সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেই। হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বলা হয়ে থাকে। দু'টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় - যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।

প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়।
  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে সিস্টোলিক ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক ৮০ মিলিমিটার মার্কারি।
  • কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি সিস্টোলিক ১৪০ এবং ডায়াস্টোলিক ৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
  • অন্যদিকে রক্তচাপ যদি সিস্টোলিক ৯০ এবং ডায়াস্টোলিক ৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়।
  • যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলিকে সাধারণত দায়ী করা হয়ে থাকে সেগুলি হলঃ 
  • বেশি লবণ গ্রহণ
  • অতিরিক্ত মেদ বা মাত্রাতিরিক্ত ওজন
  • কাজের চাপ বা স্ট্রেস
  • ধূমপান ও মদ্যপান করা 
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ
  • অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় পান করা 
  • পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
  • নিদ্রাহীনতা
  • বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়া
  • নিকট আত্মীয়দের হাই ব্লাড প্রেশার থাকা
উচ্চরক্তচাপ সর্বাপেক্ষা সাধারণ জটিল উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অসুস্থতার একটি। এখন পর্যন্ত ৫০ টির অধিক জিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে উচ্চ রক্তচাপের গবেষণার জন্য এবং এই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে

এক সময় ধরে নেয়া হত কেবল বয়স্ক মানুষ অর্থাৎ ৪০ বছরের বেশি হলেই কারো উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু এখন চিকিৎসকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অল্পবয়সীদের মধ্যেও এ রোগ দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ নিজেরাই জানেন না যে তারা  উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে ভুগছেন।

তবে যাদের অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হয়, তাদের রক্তচাপ বেশি থাকার কিছু কারণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছেঃ কিডনি সমস্যা, রক্তনালী সরু হয়ে গেছে, হরমোন সমস্যা, থাইরয়েড সমস্যা, পিটুইটারি গ্লান্ডের সমস্যা, মস্তিষ্কে কোন সমস্যা থাকলে, স্টেরয়েড গ্রহণের ধারাবাহিকতা ইত্যাদি। 
অনেকে মনে করেন, কারো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা থাকলে হয়ত সেটিকে হাইপারটেনশন বলে। কেউ মনে করেন কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হয়ত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সময় যে বুক ধড়ফড় করে সেটাই হাইপারটেনশন।- এগুলি মূলত ভুল ধারণা 

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ

উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা
  • মাথা গরম হয়ে যাওয়া
  • মাথা ঘোরানো
  • ঝাপসা দৃষ্টি বা দাগ দেখা
  • ঘাড় ব্যথা করা
  • বুকে ব্যথা বা চাপ
  • অস্বাভাবিক ক্লান্তি
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া
  • অল্পতেই রেগে যাওয়া
  • অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
  • রাতে ভালো ঘুম না হওয়া
  • নাক দিয়ে রক্ত ​​পড়া
  • অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

উচ্চ রক্তচাপ হলে কী করবেন

জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা দরকার এবং কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে-
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা 
  • খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
  • মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কম করা
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা 

উচ্চ রক্তচাপের হোমিও প্রতিকার

হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছে হোমিওপ্যাথি। এমন কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রয়েছে যেগুলি এই সমস্যায় ম্যাজিকের মতো ফল দিয়ে থাকে। মিডিয়ার কল্যানে আজ মানুষজন এই বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।
বহু চিকিৎসকরা হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ব্যক্তি ভেদে এবং লক্ষণ সাদৃশ্যে কিছু হোমিও ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যেগুলি ব্যবহার করে অনেক রোগীদের ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে অনায়াসেই। যেমনঃ Natrum Mur, Glonoinum, Crataegus, Strophanthus, Passiflora, Veratrum Viride, Rauvolfia Serp, Adrinalin, Zincum met ইত্যাদি। 
সাধারণ অবস্থায় কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই লক্ষণ সাদৃশ্যে এই রকম কিছু ঔষধ গ্রহণ করেও অনেক রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। এই সমস্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের এলোপ্যাথির মতো কোন সাইড ইফেক্ট নেই। তবে আপনি যদি চিকিৎসক না হয়ে থাকেন তাহলে নিজ নির্বাচনে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। 

অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ঔষধ গ্রহণ করা জরুরি। কারণ এছাড়াও বহু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রয়েছে যা কেইস টেকিং করে প্রয়োগ করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। আসুন রেপার্টরীতে হাই প্রেশার চিকিৎসার জন্য নির্বাচিত কিছু ঔষধ দেখে আসি....
উচ্চ রক্তচাপের হোমিও ঔষধ
ইতিপূর্বে আমি বলেছি উচ্চ রক্তচাপ এর এলোপ্যাথিতে যে চিকিৎসা রয়েছে সেখানে সারাজীবন ধরেই ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। যেগুলি বিভিন্ন পার্শপ্রিতিক্রিয়া তৈরী করে। কিন্তু আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, যখনই কারো উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হয় তার পিছনে কোন না কোন কারণ বিদ্যমান থাকে। সঠিক কারণটির নির্ণয় করে প্রথম অবস্থায় যদি এই ধরনের রোগীদের প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা যায় তাহলে তখনই তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। 

কিন্তু দেখা যায়, যারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে আসেন তারা মূলত দীর্ঘদিন যাবত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ এলোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার কারণে তাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ জটিলতা জেগে উঠে। এক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করা হলে জটিল রোগীরাও ভালো থাকছেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য হোমিওপ্যাথি স্রষ্টার একটি আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
Dr. Delowar Jahan Imran
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤