প্রফেসর বি এন নিকেটন দীর্ঘায়ু লাভের এক গবেষণা রিপোর্টে ৩টি কাজের কথা বলেন। এগুলো হলো পরিশ্রম করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, প্রতি মাসে কমপক্ষে একদিন রোজা বা উপবাস থাকা। এতো হলো সেদিনের গবেষণা অথচ এই প্রক্রিয়া পালন করে আসছেন মুসলিমরা বহু বছর যাবৎ। আমাদের প্রিয় রাসুল সাঃ বলেন রোযা রাখো সুস্থ থাকবে (মুসনাদে আহমাদ তাবারানি)। রোজা রাখার ফলে মুসলমানদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যবোধ আরো বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। মানুষের জাগতিক বিষয়বস্তুর প্রতি ঝোঁক অনেকাংশে কমে যাওয়ায় ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক দুশ্চিন্তা কমে গিয়ে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি অনেকাংশে লাঘব হয়ে থাকে।
রোজা রাখার ফলে সেহরির পর থেকে ৪-৫ ঘণ্টা যাবৎ খাদ্যবস্তু হজম হয়ে শরীরে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। তারপর শরীরে মজুদ থাকা সুগার যা মাংসপেশি ও লিভারে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা ছিল, তা ভেঙে শরীরে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। মজুদের পরিমাণ ভেদে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত গ্লাইকোজেন জোগান দিতে পারে। তার পরবর্তী সময় মানে বিকাল বেলায় শরীরে জমাকৃত চর্বি ভেঙে শক্তি জোগান দিয়ে থাকে।
সুতরাং রোজা রাখার ফলে শরীরের জমাকৃত চর্বি খরচ হয়ে শরীরে চর্বির মজুদ কমিয়ে দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফলে রোজা সঠিকভাবে পালন করলে এর দ্বারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তবে এখানে একটা প্রশ্ন হলো অনেক মানুষের শারীরিক ওজন রোজায় না কমে আরও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, কারণ তারা চর্বি জাতীয় ও অতি চিনিযুক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে তা ঘটে থাকে। বছরের অন্য সময়ের মতো রোজার সময়ও সুষম খাদ্য (ব্যালেন্স ডায়েট) পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে বা অতিভোজন পরিহার করতে হবে।
রোজার উপকারিতাগুলি কি কি ?
- রোজা রাখার ফলে হজম ও পরিপাক যন্ত্রগুলো বিশ্রাম লাভ করে এবং সঞ্জীবনী শক্তি লাভ করে
- রোজা রাখার ফলে জৈব বিষ (Toxin) ধ্বংস হয় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- রোজা রাখার ফলে ওজন ও মেদভুঁড়ি কমে আসে। যাদের রক্তে চর্বির হার বেশী এক সপ্তাহ রোযা রাখলে কোলেস্টেরল কমে আসবে।
- রোযার মাধ্যমে লিভারে পুঞ্জিভূত চর্বিগুলো ব্যাবহারের ফলে তা কমতে থাকে। চর্বি বেশী থাকলে হজম দেরীতে হয় ২ ঘণ্টার টা ৪ ঘণ্টায় হজম হয় । তখন ব্যক্তি নিজেকে ভারী মনে করে এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়। রোযা কলিজার পাশে জড় হওয়া চর্বিকে উজাড় করে দেয়।
- সারা বছর শরীরের ভেতরে যে জৈব বিষ জমা হয় রোযার দাবদাহে তা জ্বলে যায় এবং রক্ত বিশুদ্ধ হয়
- মিসরের জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের প্রান রসায়নের শিক্ষক ডঃ আবদুল বাসেত মোহাম্মদ সাইয়েদ বলেন রোযা দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- কিডনীতে পাথর সৃষ্টিতে বাধা দেয়। রোযার ফলে রক্তের সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ে। ফলে তা ক্যালসিয়ামকে জমতে বাধা দেয়। কেলসিয়াম জমেই পাথরের সৃষ্টি হয়।
- চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডঃ রবার্টের মতে রোযা সে সকল মাইক্রোর ধ্বংস করে যা বিভিন্ন সেলকে আক্রমণ করে। ফলে তা নতুন করে গঠিত হয়।
- রক্ত স্বল্পতা ও রক্তশূণ্যতা দূর হয়। রোযার মাধ্যমে ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি হলে দেহ সন্সিত লৌহ জাতীয় পদার্থ নির্গত হয় এবং তা রক্তের সল্পতা বা রক্ত শূন্যতা পূরণ করে।
- রোযা ডায়াবেটিস রোগের জন্য বিরাট রহমত যাতে Diet control করা যায়। দ্যা হেলথ সার্ভে অব ইংল্যান্ডের গবেষণায় অনুযায়ী এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর গড়ে ২৪ শতাংশ লোক ধূমপান করে। বাংলাদেশে এই হার ৪০ শতাংশ একই জরিপে জানা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের হার অনেক বেশি। আর এই রোগ রোযার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- এছাড়া রোজার পালন করলে পুরুষ হরমোন বৃদ্ধি পায়, দাঁত ও মাড়ির উপকার হয়, পেপটিক আলসার হ্রাস পায়, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, পুরুষদের যৌনরোগ থেকে বাঁচা যায়, স্নায়ুতন্ত্র শান্ত থাকে ইত্যাদি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কি বলছেন
- ড. লুটজানারের মতে, -খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস।
- ডা. জুয়েলস এম. ডি বলেছেন - যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।
- ডক্টর ডিউই বলেছেন - রোগজীর্ণ এবং রোগকিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেলো, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি। তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।
- ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন - রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি ও এবং বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়।প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে।
- বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়ড বলেন - রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়।
- প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী Macfadden সাহেব মনের প্রগাঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে রোজার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন - রোজার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হলো তার উপর বুদ্ধিবৃত্তির কর্মক্ষমতা নির্ভর করে না। বরং কতিপয় বাধ্যবাধকতার উপরই তা নির্ভরশীল। একজন ব্যক্তি যত রোজা রাখে তার বুদ্ধি তত প্রখর হয়।
- ডা. এ এম গ্রিমী বলেন - রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠে।
- ডা. আর ক্যাম ফোর্ডের মতে -রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
- ডা. বেন কিম তাঁর Fasting for health প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি।
- প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জন ফরম্যান Fasting and eating for helth প্রবন্ধে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন।
- প্রফেসর বি এন নিকেটন দীর্ঘায়ু লাভের এক গবেষণা রিপোর্টে ৩টি কাজের কথা বলেন। এগুলো হলো পরিশ্রম করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং প্রতি মাসে কমপক্ষে একদিন রোজা বা উপবাস থাকা।
- ডা. এম. কাইভ বলেন - রোজা রাখলে শ্লেষ্মা ও কফজনিত রোগ দূরীভূত হয়।
- ডা. আব্রাহাম জে. হেনরি বলেছেন - রোজা হলো পরম হিত সাধনকারী ঔষুধ।
- ডা. অ্যাডওয়ার্ড নিক্সন বলেছেন - রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং অনেক রোগের কবল থেকে দেহকে রক্ষা করে।
- ডা. লিউ থার্ট বলেছেন - দেহের রোজা অত্যন্ত হিতকর টনিক। রোজাদাররা অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকেন।
- ডা. লুইস ফ্রন্ট বলেছেন -রোজা পালনে মানবদেহ যথেষ্ট পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ হয়ে থাকে। মুসলমানরা নিশ্চয়ই রোজার মাসকে সুস্বাস্থ্যের মাস হিসেবে গণ্য করে থাকেন। রোজা বা উপবাস মেধাশক্তিকেও বৃদ্ধি করে থাকে।
"রোজা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী তবে ইফতারিতে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর" - ডা. ফ্রাঙ্কলিন
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤