বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) কারণ লক্ষণ প্রতিকার প্রতিরোধ

চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) হচ্ছে মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর শুরু হয় এবং এর সাথে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল এক থেকে বারো দিন তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে তা তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকে। অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত ৭২-৯৭% ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়।

রোগটি সাধারণত আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা ও ফুসকুড়ি নিয়ে শুরু হয়। ফুসকুড়ি রোগের শুরুতেই দেখা দিতে পারে তবে অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হয়। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা, ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, কনজাংটিভাইটিস। বড়দের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে প্রদাহ হতে পারে। এই রোগের উপসর্গকে অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বর এবং জিকা জ্বরের সাথে ভুল করে তুলনা করা হয়।

রোগের লক্ষণ সমূহ

  • রোগের শুরুতেই ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হতে পারে।অনিদ্রা হতে পারে।
  • গায়ে লাল লাল দানার মতো র‍্যাশ দেখা যেতে পারে।
  • কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
  •  চিকুনগুনিয়া জ্বরে অসহ্য মাথা ব্যথা হতে পারে। এই জ্বরে দীর্ঘসময় ধরে মাথা ব্যথার প্রভাব থাকতে পারে যা শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি ঘুমের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ব্যঘাত ঘটায়।
  • এই জ্বর হলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে বার বার বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
  • জ্বর এবং ব্যথায় কাতর হয়ে অনেকের মধ্যে অবসাদের প্রভাব দেখা যেতে পারে। ফলে কোন কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
  •  অনেক ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। আবার অনেক সময় চোখের ব্যথা এতটাই বেড়ে যায় যে আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হয় এবং চোখ জ্বালা করে।
  • সাধারণত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং উপসর্গগুলো বেশিদিন থাকে।
  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর ভালো হয়ে গেলে কয়েকদিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি লাগতে পারে কিন্তু সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে শরীর ব্যথা বা অন্য লক্ষণগুলো থাকে না।
  • আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়, যা অনেক সময় খুব ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়া রোগে ডেঙ্গু জ্বরের মতো রক্তক্ষরণ হয় না এবং রক্তের প্লাটিলেট খুব বেশি হ্রাস পায় না।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা বিশেষ করে ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR কিংবা সেরোলজির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দেখে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। এতে অনেক ক্ষেত্রে ২ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। এর রয়েছে উন্নত হোমিও চিকিৎসা। তবে এর জন্য এক্সপার্ট কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।

প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো টিকা এখনও পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। এটি যেহেতু এডিস প্রজাতির মশাবাহিত রোগ, তাই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে। যেমন- ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতাযুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশেপাশে জল জমতে না দেয়া ইত্যাদি। শুধু স্ত্রী জাতীয়  মশা দিনের বেলা কামড়ায়। আবার এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। তাই দিনে ঘুমালেও অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এ মশার ডিম জলে এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে অল্প পরিমাণ জমে থাকা জলও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। যেহেতু এডিস মশা স্থির জলে ডিম পাড়ে তাই যেন বাড়ির আশেপাশে জল জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত চারবার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে চিকুনগুনিয়া একবার হলে সাধারণত আর হয় না। এছাড়া অনেক বিষয়েই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের মধ্যে সাদৃশ্য আছে। এ রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এডিস মশা প্রতিরোধ। এজন্য এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা এবং মশা নির্মূল করার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাবধানতাই একমাত্র এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা প্রাত্যহিক জীবনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে রোগী যদি হোমিও চিকিৎসার আওতায় চলে আসে তাহলে এই সকল জটিলতা থেকে রেহাই পেতে পারে।
Dr. Delowar Jahan Imran
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤