ইনফ্ল্যামেটরি বাওল ডিজিজ - আইবিডি হলো আমাদের পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত একটি জটিল সমস্যা। Inflammatory bowel disease - IBD মূলত কয়েকটি অসুখের একটি সম্মিলিত নাম। দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক রোগ এগুলো। ডায়রিয়া, পেটে ও বুকে ব্যথা, ওজন কমা, দুর্বলতাবোধ ইত্যাদি সাধারণ উপসর্গ থাকে রোগটিতে। আইবিডির মধ্যে দুটি রোগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে : ক্রনস ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। বাংলাদেশে ক্রনস ডিজিজের চেয়ে আলসারেটিভ কোলাইটিস বেশি হচ্ছে।
আগের পর্বে আপনারা আইবিএস সম্পর্কে জেনেছেন। ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় - আইবিডি আর ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম -আইবিএস এর মধ্যে তফাৎ মূলত কী? দুটোই কোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে আলাদা বিষয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে ভিতরে কোনও আলসার বা ঘা থাকে না। তাই কোলনস্কপি একদম পরিষ্কার রিপোর্ট দেয়। আর ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় হলে তাতে কোলনের ভিতরে ঘা থাকে।
পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজ দেখা যাচ্ছে।
আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজের সাধারণত লক্ষণগুলো অনেকটা একই রকম।
রোগ নিয়ন্ত্রণের কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যয়বহুল। আবার কিছু ওষুধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগ ভালো না হলে সার্জারি বা অপারেশন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা। সাধারণত ক্রনস ডিজিজে আক্রান্তের অর্ধেকেরই সার্জারি করা হয়ে থাকে ।
এলোপ্যাথি এই সকল রোগ নির্মূল করতে ব্যর্থ হলেও এটা কখনই মনে করবেন না যে - আপনি এর থেকে মুক্তি পাবেন না। কারণ এই রোগসমূহ স্থায়ী ভাবে নির্মূল করার চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি - বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানেন না। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত যেকোন প্রকার রোগে হোমিওপ্যাথি দারুন কার্যকর। তবে মনে রাখবেন - এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরে অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রপার ট্রিটমেন্ট নিলে এই সকল রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আগের পর্বে আপনারা আইবিএস সম্পর্কে জেনেছেন। ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় - আইবিডি আর ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম -আইবিএস এর মধ্যে তফাৎ মূলত কী? দুটোই কোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে আলাদা বিষয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে ভিতরে কোনও আলসার বা ঘা থাকে না। তাই কোলনস্কপি একদম পরিষ্কার রিপোর্ট দেয়। আর ইনফ্লেমেটারি বাওয়েল ডিসিজ় হলে তাতে কোলনের ভিতরে ঘা থাকে।
পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রনস ডিজিজ দেখা যাচ্ছে।
আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজের সাধারণত লক্ষণগুলো অনেকটা একই রকম।
- জ্বরজ্বর ভাব, দুর্বলতা এবং ক্লান্তিবোধ
- পেটে ব্যথা, কারো কারো পেট মোচড়ায়
- অনেকের বমি বা বমি বমিভাব হয়
- খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়, চেষ্টা করেও খাওয়া যায় না
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা
- পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, তবে সব সময় যে তাজা রক্ত যায় তা নয়
- পায়খানায় রক্ত থাকার কারণে অনেক সময় ঘন কালো রঙের পায়খানাও হয়
- কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকে
ক্রনস ডিজিজের মূল সমস্যা হলো আমাশয়, পেট ব্যথা এবং ওজন কমে যাওয়া। আলসারেটিভ কোলাইটিস সাধারণত বৃহদান্ত্র বা লার্জ ইনটেসটাইনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্রনস ডিজিস মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থানে হতে পারে। রোগ দুটি সাধারণত ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে হয়ে থাকে।
অলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative Colitis)
আমাদের কোলন বা বৃহদান্ত্রের প্রদাহকেই মূলত কোলাইটিস বলা হয়ে থাকে। আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয় যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোট ছোট আলসার বা ঘা গুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আলসারগুলো একে অন্যের সাথে আটকে থাকে। এই রোগ জীনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে - রক্ত আমাশয়, পেটে ব্যাথা, মলদ্বারের ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
তবে রক্ত আমাশয়ই হলো এ রোগের বিশেষ লক্ষণ। কোন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি রক্ত আমাশয় থাকে, তাহলেই এ রোগ সন্দেহ করতে হবে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
ক্রনস ডিজিজ (Crohn's Disease)
এই রোগে মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থান আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ইলিয়াম বা স্মল ইনটেসটাইনের একটি বিশেষ অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো কোলনও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ক্রনস ডিজিজ রোগে পরিপাকতন্ত্রের নালির গাত্রে স্কার বা ফাইব্রোসিস হতে থাকে এবং নালি সরু হয়ে যেতে থাকে। জটিলতা হিসেবে পায়খানার সমস্যা হওয়া, ফোড়া, ফিস্টুলাও হতে পারে। ক্রমাগত ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং টান ধরা, মলের সাথে রক্ত যাওয়া এর অন্যতম লক্ষণ।
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ আইবিডি - কারণ
ঠিক কী কারণে আইবিডি হয় তা এখনো নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে কিছু বিষয় এ রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
- পরিবারে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কারো এ রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
- ধূমপান, মদ্যপান করলে ক্রনস ডিজিজ বেশি হতে দেখা যায়। তবে ধূমপায়ীদের আবার আলসারেটিভ কোলাইটিস কম হয়।
- ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ যেমন - আইসোট্রেটিনন ব্যবহার করলে
- দীর্ঘদিন ধরে এলোপ্যাথিক ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে। যেমন -আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ইত্যাদি
- শহরের লোকের বেশি হয়, বিশেষ করে শিল্পকারখানার আশপাশে বা যেখানে বাতাসের দূষণ বেশি সেখানে বসবাসকারীদের এটি বেশি হতে দেখা যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাস, অন্ত্রের জীবাণু বা জীবাণুর সংক্রমণ এ রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদি আঁশজাতীয় খাবার, শাকসবজি কম খাওয়া হয়, তবে এ রোগ বেশি হয়। বলা যায়, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতির কারণেই পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি সাধন হয়ে এ অসুখগুলো হয়।
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - জটিলতা
এ রোগ দুটির নানা প্রকার উপসর্গসহ দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন জটিলতা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি এ রোগের কারণে অনেক বেড়ে যায়। আরো কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
- অ্যানাল ফিস্টুলা হতে পারে
- অপুষ্টিজনিত অসুখবিসুখ হয়
- কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়
- শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন - চোখ, অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া, অস্টিওপরোসিস, লিভারের প্রদাহ ইত্যাদি
- শিশুর শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - রোগ নির্ণয়
রোগের লক্ষণসহ কিছু রুটিন পরীক্ষা যেমন -রক্ত, পায়খানা, পেটের এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যদি এ রোগ নির্ণয়ে সহায়ক। তবে রোগ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করার জন্য কলোনোস্কোপি, এন্টারোস্কোপি, ফ্লেক্সিবল সিগময়ডোস্কোপি ও এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করা হয়। অনেক সময় বায়োপসি করেও রোগ নির্ণয় সম্ভব করা যায়। পেটের সিটিস্ক্যান, এমআরআইও মাঝে মধ্যে এ রোগ শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ - চিকিৎসা
আগেই বলেছি এ রোগ নিরাময়ের কোন এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নেই। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ডাক্তারগণ পর্যন্ত লক্ষণনির্ভর বা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের হাতে এই রোগ স্থায়ী ভাবে সারানোর মতো কোন ঔষধ নেই এলোপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্রে অর্থাৎ আপনাকে সব সময় ঔষধ খেয়ে যেতে হবে ভালো থাকার জন্য। চিকিৎসা প্রধান উদ্দেশ্য হল অন্ত্রের প্রদাহ কমানো এবং উপসর্গগুলি থেকে স্বস্তি দেওয়া। জটিলতার ক্ষেত্রে সার্জারির করার পরামর্শ দিয়ে থাকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকরা।রোগ নিয়ন্ত্রণের কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যয়বহুল। আবার কিছু ওষুধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগ ভালো না হলে সার্জারি বা অপারেশন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা। সাধারণত ক্রনস ডিজিজে আক্রান্তের অর্ধেকেরই সার্জারি করা হয়ে থাকে ।
এলোপ্যাথি এই সকল রোগ নির্মূল করতে ব্যর্থ হলেও এটা কখনই মনে করবেন না যে - আপনি এর থেকে মুক্তি পাবেন না। কারণ এই রোগসমূহ স্থায়ী ভাবে নির্মূল করার চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি - বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানেন না। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত যেকোন প্রকার রোগে হোমিওপ্যাথি দারুন কার্যকর। তবে মনে রাখবেন - এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরে অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রপার ট্রিটমেন্ট নিলে এই সকল রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤