প্রতিষেধক ঔষধ নির্বাচন করা হয়ে থাকে যে কোন মহামারীতে (মহামারীর প্রাইমারী স্টেজে) আক্রান্ত দশ জন বা বিশ জন রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করে যে কয়টা লক্ষণ কমন থাকে অর্থাৎ প্রায় সকলের মধ্যেই পাওয়া যায় সেই লক্ষণের উপর ভিত্তি করে। চিকিৎসক কর্তৃক পর্যবেক্ষিত কমন (যে কয়টি লক্ষণ সকলের মধ্যেই দৃষ্টিগোচর হয়) লক্ষণ গুলো হোমিওপ্যাথিক যে ঔষধটি সুস্থ মানবদেহে উৎপাদন করতে সক্ষম সেই ঔষধটিই হবে উক্ত মহামারীর জন্য যথার্থ প্রতিষেধক ঔষধ।
মহামারীতে আক্রান্ত রোগীর বা রোগীদের সেকেন্ডারী স্টেজের লক্ষণ বা কনস্টিটিউশনাল সিম্পটম অর্থাৎ ধাতুগত লক্ষণ নিয়ে সঠিক প্রতিষেধক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে সেকেন্ডারী স্টেজে যদি প্রতিটি রোগীকে স্বতন্ত্রভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাদের লক্ষণ সমষ্টি অনুযায়ী একক ঔষধ সূক্ষ্ম মাত্রায় রোগীকে প্রদান করা যায় তাহলে অবশ্যই রোগী পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।
মহামারী (Epidemic) : মড়ক, যে সংক্রামক রোগে বহু লোক মৃত্যুবরণ করে। সংক্রামক রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে একটি স্বল্প সময়ের মধ্যে, সাধারণত দুই সপ্তাহ বা তার কম সময়ের মধ্যে জনসংখ্যার একটি বৃহৎ সংখ্যক লোককে। উদাহরণস্বরূপ, মেনিংকোকাল ইনফেকশনগুলিতে, প্রতি হেক্টর প্রতি ১০০,০০০ জন লোকের মধ্যে ১৫ টির বেশি ক্ষেত্রে আক্রমণের হার একটি মহামারী বলে মনে করা হয়।
মহামারী রোগে ১৮০১খ্রি. ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান এর সংবিধান "অর্গানন অব মেডিসিন" গ্রন্থ এর এফোরিজম ৩৩ ফুটনোট ১৭ তে হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক আছে ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করে ভাল ফলাফল পেয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন। যা ইংরেজি ও বাংলা অনুদিত অংশ সংযুক্ত আছে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির জনক বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর "দি লেজার রাইটিং" গ্রন্থ এর ৩৭৬-৩৮৩ পৃষ্ঠায় হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তখনকার সময় Scarlet fever এর জন্য তিনি হোমিওপ্যাথি ঔষধ Belladonna প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।
তার দেখানো পদ্ধতি অনুসারে বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহামারীতে ও সম্প্রতি চিকনগুনিয়া জ্বর, ডেঙ্গু জ্বরে হোমিওপ্যাথি প্রতিষেধক ও চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে বিশ্বে মহামারী রুপ ধারণকারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসাবে হোমিওপ্যাথি ঔষধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ পরীক্ষা পরীক্ষামূলক ভাবে দিতে পারেন এবং লক্ষণ ভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও সফল চিকিৎসা প্রদান করা যাবে।
এছাড়া হোমিওপ্যাথিক লক্ষণ ভিত্তিতে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর অর্গানন অব মেডিসিন, দি লেজার রাইটিং, হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা, হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরী সহ অন্যান্য গ্রন্থের সহায়তায় সফলতার সহিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান করা যাবে।

- ১৭৯৯ ও ১৮০১ সালে মহামারী আকারে দেখা দেয়া স্কারলেট ফিভার কিভাবে হোমিওপ্যাথি ঔষধ বেলেডোনা-৩০ প্রয়োগ করে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে রোগীর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
- ১৮১৩ সালে জার্মানীর টাইফাস ফিভার মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসা ধারায় মৃত্যুর হার ছিল যেখানে ৩০% সেখানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ২%।
- ১৮৩১ সালে অস্ট্রেলিয়ার কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ৪০% থাকলেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১০%।
- ১৮৪৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির কলেরা মহামারীতে হোমিওপ্যাথির সাফল্য ৯৭% প্রচলিত চিকিৎসায় সাফল্য ৯৭% প্রচলিত চিকিৎসায় সাফল্য ছিল মাত্র ৪০% থেকে ৫০%।
- ১৮৫৪ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৫৯.২% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৯%।
- ১৮৫৫ সালে আফ্রিকার রিও-র কলেরা মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৪০% থেকে ৬০% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ২%।
- ১৮৬২ থেকে ১৮৬৪ সালের নিউইয়র্ক ডিপথেরিয়ার সংক্রমণে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ৮৩.৬% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১৬.৪%।
- ১৮৭৮ সালে আমেরিকার ইউলো ফিভার মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ১৫.৫% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ৬%।
- ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীতে প্রচলিত চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ২৮.২% আর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিল ১.০৫%।
স্মরণকালের ডেঙ্গু জ্বর ও চিকনগুনিয়া জ্বর রোগের প্রার্দুভাবেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সাফল্য রয়েছে।
১৯৯৫ সালে কিউবাতে কেরাটোকঞ্জাকটিভকইটিস রোগে ও ২০০৭ সালে ভারতের কেরালাতে চিকনগুনিয়া রোগে হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারী আশা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিবিসি- বাংলা যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% লোক নিয়মিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে।
সেখানে জেনারেল স্ট্যাটিসটিকস, বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয়া কলেরা, স্কারলেট ফিভার, ইয়ালো ফিভার, নিউমোনিয়া, টাইফাস ফিভার, ডিফথেরিয়া, শিশুরোগ, উন্মত্ততা ইত্যাদি এপিডেমিক ও রোগগুলোর বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান, বিভিন্ন হাসপাতালের রিপোর্ট ও তথ্যসূত্রসহ যে প্রমাণ ও বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে- তা দেখলে আশ্চর্য হয়ে ভাবতে হয়, চোখের সামনে মানুষের আরোগ্যকারী এই উপায় থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করছি না?
লিখেছেন :- ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু); চিকিৎসক, শিক্ষক, কলামিস্ট ও প্রাক্তন সাংবাদিক; ডা. আব্দুস সালাম হোমিওপ্যাথি হেলথ কেয়ার, শেরপুর, বগুড়া
তথ্যসূত্র :
তথ্যসূত্র :
- Book: Organon of Medicine - Dr. Samuel Hahnemann
- Book: The Lesser Writings - Dr. Samuel Hahnemann
- Book: Practical Key to Homeopathy - Dr. Nazir Hossain
- Website: https://hpathy.com
- Website: http://www.similia.lv/interesanti/par-homeopatiju/lives-saved-by-homeopathy/

ডাঃ দেলোয়ার জাহান ইমরান
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক (রেজিঃ নং-৩৩৪৪২)
ডিএইচএমএস (বিএইচএমসি এন্ড হসপিটাল), ডিএমএস; ঢাকা
যোগাযোগঃ নিউটাউন হোমিও হল, নিউটাউন কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন, সাইনবোর্ড, ডেমরা, ঢাকা
Phone: +88 01671-760874; 01977-602004 (শুধু এপয়েন্টমেন্টের জন্য)
About Me: Profile ➤ Facebook ➤ YouTube ➤